নিজস্ব প্রতিনিধিঃনাম তার জাহিদুর রহমান ইকবাল (৭০)। নিজেকে পরিচয় দিতো ‘বনবন্ধু’ জাহিদুর রহমান ইকবাল নামে। মুজিববর্ষের লোগো, প্রধানমন্ত্রীর বাণী সম্বলিত ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়ে গাছ লাগানোর কথা বলে প্রতারণা করতো ‘বনবন্ধু’ জাহিদুর। এর মাধ্যমে সে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নিজেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিত। এছাড়া ব্যাংকে লোন করে দেয়ার কথা বলেও অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের শাহ আলী ভবন থেকে তাকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুণ-অর-রশীদ তার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন।
ডিসি হারুণ-অর-রশীদ বলেন, গত ৩০ বছর ধরে কারওয়ানবাজার এলাকায় গ্রেফতার জাহিদুর রহমান ইকবাল ওরফরে বনবন্ধু জাহিদুর রহমান ইকবাল প্রতারণা করে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুজিববর্ষের লোগো ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করাই তার বর্তমানে মূল প্রতারণা। সে প্রায় ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়েছে। এর মাধমে সে তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতারক বনবন্ধু জাহিদুর ট্রি প্লান্টেশনের নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পরিচয় দিত। মুজিববর্ষে সে বিভিন্ন জায়গা গাছ লাগাবে বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিত।
জহিদুর রহমানের অপরাধের ব্যাখ্যা দিয়ে ডিসি হারুন-অর-রশীদ বলেন, জাহিদুর রহমান প্রতারণা মূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করত। অবৈধভাবে সীল তৈরি ও সংরক্ষণ করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে মুজিববর্ষের লোগো ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে প্রায় ৪০ হাজার চিঠি পাঠিয়েছে। কনসালটেন্ট গ্রুপ লিঃ, এসএম ই কনসালটেন্ট লিঃ, ইইএফ কনসালটেন্ট লিঃ এর নামে তিনটি অবৈধ কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং সিইও হিসেবে নিজেকে দাবি করে। সে কোম্পানিগুলোর কোনও বৈধ কাগজপত্র সে দেখাতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন লোন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করতো এই প্রতারক।
জাহিদুর রহমান ব্যক্তিগত গাড়িতে জাতির পিতার ছবি ব্যবহার করে প্রতারণামূলক কর্মকান্ড করত। যা জাতির পিতার ছবির অবমাননার শামিল। এছাড়াও এনবিআর, আয়করের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক থেকে লোন প্রসেসিং, বাংলাদেশ ট্রি প্লান্টেশন ফাউন্ডেশন নামে নামসর্বস্ব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে বৃক্ষরোপণের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিপর্যায় থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলো।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তার বিরুদ্ধে আমরা হাজার হাজার অভিযোগ পেয়েছি। আমরা যখন তার কাছে গেলাম সে তখন বলে আপনাদের যে পুলিশ ব্যাংক সেটা তো আমি কন্সালটেন্সি ফার্ম করে দিয়েছি। সেটাও নাকি বিনা পয়সায় করে দিয়েছে। সে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সিইও ও চেয়ারম্যান। তার পড়াশোনার কোনও সার্টিফিকেট নেই।
আমরা তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করবো। রিমান্ডে নিলে বোঝা যাবে সে কত লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
কি পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসি বলেন, পাঁচশ লোকের মৌখিক অভযোগ পেয়েছি। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করছি। তবে রিমান্ডে না নেয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না সে কত টাকা হাতিয়েছে। শুনেছি ২০০৭ সালে ভাটমারা থেকে সতন্ত্র মেয়র নির্বাচন করে তার সব জামানত হারিয়েছিলো। এছা অনেক ভুক্তভোগী আমাদের কাছে এসেছে। তার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রতারক ‘বনবন্ধু’ জাহিদুর রহমান ইকবালের অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- কনসালটেন্ট গ্রুপ লিঃ, এসএমই কনসালটেন্ট লিঃ ও ইইএফ কনসালটেন্ট লিঃ এর ব্যানারে ফিনানন্সিয়াল কনসালটেন্স, কোম্পানীর রেজিস্ট্রেশন, সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন, ট্রাস্ট রেজিস্ট্রেশন, ফাউন্ডেশন রেজিস্ট্রেশন, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ডকুমেন্টস প্রসেসিং, ব্যাংক বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসেসিং, টিন ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ফায়ার লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ডকুমেন্টস প্রসেসিং ইত্যাদির নামে অসংখ্য ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
গ্রেফতারকৃতের কাছ থেকে ২৭০টি সীল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসিং ফাইল ১৮৪টি, মুজিব বর্ষের লোগো ব্যবহার করা ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী সম্বলিত চিঠি ৫০০টি, সিপিইউ দুটি, প্রিন্টার দুটি, স্ক্যানার একটি, মনিটর দুটি, ল্যাপটপ একটি, মোবাইল দুটি ও একটি টয়োটা করোলা গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।