ইবি প্রতিনিধি:দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ই মার্চ। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কায় বন্ধ করে দেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ই মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ক্যাম্পাস। প্রশাসন পরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়।
দীর্ঘ সেশনজটের শঙ্কায় আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নেওয়ার দাবিতে গত ৯ ডিসেম্বর মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে হল বন্ধ রেখে জানুয়ারি মাসে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে বিভিন্ন বিভাগ পরীক্ষার সময় সূচি দিয়েছে।
এর আগে সেমিস্টার, হল ও পরিবহন ফি (ফরম ফিলআপ) পরিশোধের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের প্রায় এক বছর হল ও পরিবহন সেবা না নিলেও পরীক্ষার কারণে গুনতে হচ্ছে ফি। বিষয়টি করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলো হল, পরিবহন ও টিউশন ফি মওকুফের দাবি জানিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষার টিউশন ও পরিবহণ ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, পরিবহন ফি ও অন্যান্য ফি গ্রহণ অযৌক্তিক ১০ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। শিক্ষার্থীরা কোন রকম পরিবহন, আবাসিক হলসহ কোন সেবাই পায়নি। একাডেমিক কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীদের সেবা বাবদ অর্থও ব্যয় হয়নি। তবুও তাদের থেকে ফি নেওয়া হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। হল না খুলে পরীক্ষা গ্রহণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা না দিয়ে দায়সারা কাজ করছে। তারা আমাদের বোঝা মনে করেন। হল না খুলে মেসে রেখে যে পরীক্ষা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে সেটা আরো বিপদজ্জনক।
আরবি ভাষা সাহিত্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুর রউফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনা প্রশাসন। বরং প্রায়ই নানা অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির নামে নামে বেনামে ফি বৃদ্ধি করেছে। করোনা মহামারি হওয়ার পরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছিল নীরব। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত সেমিস্টার ফি ও পরিবহন মওকুফ করা।
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের আরেক শিক্ষার্থী হোসনেয়ারা খাতুন বলেন, করোনার ভয়াল থাবায় মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে গিয়েছে। শিক্ষার্থীরা হারিয়েছে টিউশনি যার মাধ্যমে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার খরচ বহন করত। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন যখন সেবা না দিয়েও হল,পরিবহন, সেমিষ্টার ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে, তখন শিক্ষার্থীদের কষ্ট কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। বাবা-মায়ের কাছেও পারবে না চাইতে আবার নিজেও যোগাড় করতে পারবে না অন্যদিকে প্রশাসনের চাপ! পরীক্ষা দিতে না পারার দুশ্চিন্তা! সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীদের ধ্বংস করা কখনোই ঠিক নয়। তাই সেবা না দিয়ে অর্থ আদায় থেকে বিরত থাকার জন্য কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিকে সাদিক বলেন, হল ও পরিবহনের অন্যায্য ফি আদায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়াটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু শিক্ষার্থীরা পরিবহণ ব্যবহার করেনি, অবশ্যই তাদের ফি মওকুফ হওয়া উচিত। আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে মনে করি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি প্রফেসর ড. তপন কুমার জোর্দ্দার বলেন, হল প্রভোস্টদের সঙ্গে কথা বলব। যেন তারা বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নেন।
এ বিষয়ে উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলা সম্ভব নয়। তবে ফি মওকুফের দাবিটি যৌক্তিক। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।