ধর্ম ডেস্ক:এ বিশ্বজগত একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। সেদিন সব কিছু বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের ন্যায়, চারদিকে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। বড় বড় অট্টালিকা, পাহা-পর্বত ও স্যাটেলাইটগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হবে। মানুষগুলো ভয়ে দিক-বিদিক ছুটাছুটি করবে। সবাই বলতে থাকবে কি হলো পৃথিবীর। এমন হচ্ছে কেন। কিন্তু কেউ কোথাও পালাতে পারবে না। এই দিনটির নাম কিয়ামত। আর এই দিনটি থাকবে প্রচন্ড উত্যপ্ত। সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে।
মানুষের থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থান করবে সূর্য। সেদিন সকল মাখলুককেই আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কিয়ামতের ময়দানে সেই কঠিন মুহুর্তে হিসাব দিতে হবে সব কৃতকর্মের। দুনিয়ায় যারা পাপাচারে লিপ্ত ছিলেন, তারা সেদিন সূর্যের তাপে অনেক কষ্টে থাকবেন। আর যারা দুনিয়ায় আল্লাহর হুকুম মেনে চলেছেন, সেদিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবেন তারা।
কিয়ামতের ময়দানের সেই কঠিন মুহুর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন মানবমণ্ডলীকে লাল শ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্র করা হবে, যেন তা পরিচ্ছন্ন আটার রুটির মতো। ওই জমিনে কারও (বাড়িঘরের বা অন্য কিছুর) চিহ্ন থাকবে না। (বুখারি ও মুসলিম)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। ব্যক্তির আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারও ঘাম হবে টাখনুসমান, কারও হাঁটুসমান, কারও কোমরসমান ও কারও মুখসমান। (মিশকাত, পৃষ্ঠা : ৪৮৩)
সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে মহান আল্লাহ কিছু মানুষকে তাঁর রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যেদিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনও ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)
ন্যায়পরায়ণ শাসক
যারা দুনিয়ায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব সময় সুবিচার করেছেন। কারও প্রতি অন্যায় অবিচার করেননি। আল্লাহ এই শ্রেণির লোকদের ভীষণ ভালোবাসেন। সেই কঠিন দিনে আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৯)
যে যুবকের জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে
যৌবন মহান আল্লাহর অনেক বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতকে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তারাই সফল হয়। সাধারণত যৌবন মানুষকে বেপরোয়া বানিয়ে দেয়, যৌবনের তাড়নায় কেউ কেউ ডুবে যায় পাপের সাগরে। এই যৌবনকে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, তারা কঠিন কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে।
যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে
যেব্যক্তি আল্লাহর খুশির উদ্দেশ্যে মসজিদে গিয়ে ইবাদত করে। আল্লামা নববী (রহ.) বলেন, মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পৃক্ততা দ্বারা উদ্দেশ্য, মসজিদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বসহকারে মসজিদে পড়া। সার্বক্ষণিক মসজিদে বসে থাকা নয়। (উমদাতুল কারি : ৫/২৬১)
ওই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর জন্য
যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে, তখন সেই ভালোবাসা যদি আল্লাহ জন্য, তাহলে আল্লাহ বান্দার ওপর খুশি হন। তবে ইসলামে নিষিদ্ধ এমন ভালোবাসা নয়। এছাড়া তারা আল্লাহর খুশির জন্য একে অপরের সঙ্গে পৃথকও হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন, সেসব মানুষ কোথায়, যারা আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসত। আজ আমি তাদের আমার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেব। আজকের দিনটা এমনই যে আজ আমার ছায়া ছাড়া কোথাও কোনও ছায়া নেই। (মুআত্তায়ে মালিক, হাদিস : ১৭১৮)
সে ব্যক্তি, যাকে কোনও উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’। সেই সব মুত্তাকিকে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন।
সে ব্যক্তি, যে এমন গোপনে দান করে যে তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান-সদকাকারীকে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন।
সে ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে।
উপরোক্ত গুণগুলো একজন খাঁটি মুত্তাকির মধ্যেই পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।