বরগুনা প্রতিনিধি ঃবরগুনার বহুল আলোচিত স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ফাঁসির আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন তিনি।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এই মামলায় রিফাতের স্ত্রীসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশের পরই মিন্নিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই মিন্নিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সবাইকে কারাগারে পাঠানো হবে।
রায়ে প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি ৬ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। আসামিদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্য আসামিরা ৭ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরগুনা জেলা দায়রা ও জেলা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। কয়েকশ পৃষ্ঠার রায় বিচারক সারসংক্ষেপে মূল অংশ পড়ে শোনান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।
আর খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯), ও কামরুল ইসলাম সাইমুন (২১)।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। একাধারে রিফাতকে কুপিয়ে বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে নিহতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত উল্লেখ্য করে বরগুনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এরপর মামলার তদন্তে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। তখনই অনেকেই মনে করছেন নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করা হলে ঘটনার আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। স্যোস্যাল মিডিয়াসহ সারা দেশে বিতর্কের ঝড় বইতে শুরু করে।
বিশেষ করে রিফাত হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির বিভিন্ন ছবি, ভিডিও ও ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়। সন্ত্রাসী নয়নের মা’র দাবি- নয়নের সঙ্গে মিন্নি বিয়ে হয়েছিল, সংসারও হয়েছিল। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরেও নয়নের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল মিন্নির। হত্যার একদিন আগেও নয়নের সঙ্গে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন মিন্নি। এছাড়াও নয়ন-মিন্নি বিয়ে রেজিষ্ট্রি করা কাজীও কাবিলনামাসহ বিয়ের সতত্যা নিশ্চিত করেন। এছাড়াও রিফাত হত্যার সময় প্রথম দিকের একটি ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতে প্রথম দিকে রিফাতকে যখন সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন মিন্নিকে নিরব দেখা যায়। অনেক পেছন পেছন নিরব ও স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন মিন্নি।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার (১৩ জুলাই) বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রিফাতের বাবা ও মামলার বাদী আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। এসময় হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পুত্রবধূ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার ও রিমান্ডের দাবি জানান দুলাল শরীফ। এরপর চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পর নানা আলোচনা-সমালোচনায় মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়।