নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দেখতে আকর্ষণীয় ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় প্রায় সব বয়সী মানুষেরই পছন্দ আম। বাংলাদেশে প্রায় সব অঞ্চলে আম জন্মে কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চল, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর এবং কুষ্টিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে।
তবে গবেষণা ছাড়া না বুঝে আমে কেমিক্যাল ও ফরমালিন নিয়ে ভুল প্রচারণা আম বাগানী ও সংশ্লিষ্টদের আতংকিত করে তুলছে।
ফরমালিন ফল ও শাকসবজিতে কাজ করে না। বাহির থেকে প্রয়োগ করা হলেও ফরমালিন আমের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনা বলে জানিয়েছেন নিরাপদ খাদ্য নিয়ে গবেষণারত রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কৃষি রসায়ন বিভাগের একদল গবেষক।
গবেষকদল জানান, ‘মৌসুমি ফল নিয়ে নানান অপপ্রচারের কারণে অনেকে কেমিক্যাল আতংকে দেশীয় আম খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। গবেষণা ছাড়া আম নিয়ে নেতিবাচক অনেক খবরে দেশীয় ফলের বাজার চলে যাচ্ছে অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের হাতে। আর এতে উপকৃত হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানের আম ব্যবসায়ীরা, যারা ইউরোপে আম রপ্তানি করে আয় করছে লাখ লাখ ডলার ইউরো। তবে ভেজাল বিরোধী অভিযানের ফলে আজ ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। নিয়মিত অভিযান ও গণমাধ্যমে প্রচারের সুবাধে কুচক্রী ও অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত।’
গত তিনবছর ধরে আমের মধ্যে বিষক্রিয়ার উপস্থিতি নিয়ে কাজ করছেন কৃষি গবেষণার কীটতত্ত্ব বিভাগের পেষ্টিসাইড এনালাইটিক্যাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা। নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করা গবেষকদলের অন্যতম কৃষি রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেন,
‘আম পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ২৭৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে। এছাড়াও পাকা আমে রয়েছে জিংকসহ প্রচুর ভিটামিন বি-১ ও বি-২। আমে কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে- এ কথা ভেবে আমরা যদি আম খাওয়া ছেড়ে দেই তাহলে আমরা সুলভ ও সহজলভ্যে পাওয়া নানান পুষ্টিগুন থেকে বঞ্চিত হব। আমে কেমিক্যাল অভিযোগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া আম ধ্বংস করার আগে এর ক্ষতিকর মাত্রা নিয়ে আমাদের আরো বেশি ভাবতে হবে।’
গবেষক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘অনলাইনে কিংবা কুরিয়ার পরিবহনে আম আনার পর আম পচা নিয়ে অনেক অভিযোগ দেখা যায়। এক্ষেত্রে শুধু আমচাষি কিংবা ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করা ঠিক নয়। আমের ৮৩ ধরনের রোগের মধ্যে অন্যতম মারাত্মক রোগ আমের এনথ্রাকনোজ। এই রোগের জীবাণু গাছে থাকা অবস্থায় আমে যেমন ক্ষতি করে, মাঝে মাঝে আম পাড়ার পরে পাকা আম পঁচিয়ে ফেলে। পাশাপাশি আঘাতজনিত কারণে স্টেম এন্ড রট রোগে বোঁটার চারপাশে পঁচতে শুরু করে। এজন্য কেমিক্যাল দায়ী নয়। এক্ষেত্রে গাছ থেকে সাবধানতার সাথে আম পেড়ে আমের আঠা বা কষ ছড়িয়ে ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রার গরম পানিতে শোধন করে ভালমত শুকিয়ে তারপর প্যাকেটজাত করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।’
গবেষক ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কেমিক্যাল কিংবা কার্বাইড ও ফরমালিন মুক্ত আমের প্রচারণা চালিয়ে দুষ্টু চক্রের ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে অনেক টাকা। আম পাকাতে ফরমালিন কোনভাবেই দায়ী নয়।প্রাকৃতিকভাবেই আমের মধ্যে ফরমালডিহাইড থাকে, যা আম পাকাতে সাহায্য করে। ফরমালিন ফল ও শাকসবজিতে কাজ করে না। এটা শুধু আমিষে কাজ করে যা গবেষণায় প্রমাণিত।’