নিজস্ব প্রতিনিধিঃআওয়ামী লীগ নেতা সরদার মো. শাহ আলম ও ছাত্রলীগ নেত্রী ফারজানা ববি নাদিরার হৃদয়ঘটিত বিষয়টি গত কয়েকদিন যাবৎ ঝালকাঠিতে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে। দু’দিন আগে এই নেতার কাছে স্ত্রীর মর্যাদা চাইতে গেলে ছাত্রলীগ নেত্রী মারধরের ঘটনার পর এই বিষয়টি এখন ‘‘টক অব দা কান্ট্রি’’। বিশেষ করে আ’লীগ নেতা না চাইলেও ছাত্রলীগ নেত্রী বিয়ের দাবিতে অনঢ় থাকায় এই ঘটনাটি ঝালকাঠিতে এখন রসালো খবর। তাছাড়া উভয়ই ক্ষমতাসীন আ’লীগ দলীয় দুটি সংগঠনের নেতৃত্বে থাকায় ঘটনাটি মুখরোচকও বটে। কারণ ঝালকাঠি আ’লীগের রাজনৈতিক অঙ্গনে এটিও সম্ভবত বড় ধরনের নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনা। যে কারণে পত্রপত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তাদের হৃদয়ঘটিত বিষয়টি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
কেউ কেউ এই ঘটনার অনুঘটক সরদার শাহ আলমকে বিষাদগারও করছেন। এমন উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সরদার শাহ আলম রাজনৈতিক সংকটে রয়েছেন। ফলে তিনি এই দফা পরিত্রাণ পেতে পথ খুঁজছেন। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফারজানা নাদিরা ববি স্ত্রীর মর্যাদা পাওয়ার সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে শাহ আলমের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে জেলা আ’লীগের সভাপতি শাহ আলমের ক্যাডার যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন মিঠু ও মোস্তাফিজুর রহমান পিংকু এই তরুণীকে খুন ও গুমের হুমকি দিয়েছেন।
তবে কিছুতেই তরুণীকে টলাতে না পাড়ায় এখন কৌশলে সমঝোতার প্রস্তাব দিচ্ছেন। পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক চেম্বার অব কমার্স’র সভাপতি মাহবুব হোসেন অর্ধকোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার প্রস্তাব ইতিমধ্যে নাদিরার পরিবারের কাছে পৌছে দিয়েছেন। কিন্তু ছাত্রলীগ নেত্রী আপোষরফায় যেতে নারাজ থাকার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ায় বিকল্প কোন পন্থা খুঁজছেন সরদার শাহ আলম। এদিকে ঝালকাঠি আ’লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে- সরদার শাহ আলমকে বিতর্কিত এই ঘটনায় রাজধানীতে তলব করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। অবশ্য ডাক পাওয়ার সাথে সাথে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কিন্তু দু’দিন যাবৎ এই বিষয়টি নিয়ে ঝালকাঠিতে তোলপাড় চললেও ছাত্র বা যুবলীগের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য আসেনি। বরং এই দুটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ একেবারেই নিরব। এমনকি নাদিরা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের প্রতিবাদ বা বিবৃতি আসেনি। তবে শাহ আলমের জেলা আ’লীগের একটি গ্রুপ নেপথ্যে থেকে নাদিরাকে সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকতে সাহস শক্তি যোগাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বলা বাহুল্য যে- ছাত্রলীগ নেত্রী ফারজানা নাদিরা ববি স্থানীয় সাংসদ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর মালিকানাধীন একটি কলেজের সহকারী শিক্ষিকা ও ঝালকাঠি জেলা পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের কম্পিউটার অপারেটর।
বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে- সত্তরোর্দ্ধ সরদার মো. শাহ আলম নাদিরার কর্মস্থল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মূলত নাদিরা এখানে চাকরি করার সুবাদেই সরদার শাহ আলমের সাথে তার হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের সূত্রপাত হয়। যদিও নাদিরা ছাত্রলীগ বা সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বে থাকার কারণে সরদার শাহ আলমের সাথে অনেক আগেই পরিচিত ছিলেন। তবে নাদিরার অভিযোগ কর্মস্থলে শীর্ষ কর্মকর্তা হওয়ার কারণে অনেকটা চাপে পড়ে শাহ আলমের প্রেমপ্রস্তাব অত:পর শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য হয়েছেন। নাদিরার ভাষায় গত বছরের জুলাই মাসে সরদার শাহ আলম তাকে প্রেমপ্রস্তাব করেন। কিন্তু প্রথমে বৃদ্ধ শাহ আলমের প্রেমপ্রস্তাবটি পুরোপুরি নাকচ করে দেন।
এতে চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে জেলা পরিষদ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান নাদিরা অনেকটা মনের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে শেষ পর্যন্ত ওই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। যদিও এই সম্পর্কের পূর্ব শর্ত ছিল শাহ আলম প্রেমিক নাদিরার হাত ছাড়বেন না। অবশ্য এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি তরুণী নাদিরাকে নিয়ে মাসের পর মাস স্বামী স্ত্রীর ন্যায় ছিলেন। এই বিষয়টি অনেক আগেই প্রকাশ পেলেও প্রভাবশালী নেতা শাহ আলমের ক্ষমতার কাছে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখাননি। তাছাড়া নাদিরাও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছিলেন না। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছিল। সর্বশেষ এই ঘটনাটি নাদিরার পরিবার অবগত হওয়ায় তিনি পড়েন বিপাকে। যে কারণে গত বুধবার ১১ জুলাই স্ত্রীর মর্যাদা পেতে এই তরুণী জেলা পরিষদে শাহ আলমের রুমে অনশন শুরু করেন।
এই বিষয়টি মিডিয়া পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ায় সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের দৌড়ঝাপে তুমুল বিতর্ক দেখা দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক এমন ভাবনায় সরদার শাহ আলম তার স্ত্রী জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী শাহানা আলম ছুটে আসেন স্বামীকে রক্ষায়। একপর্যায়ে অবস্থানরত নাদিরাকে মারধর করে রুম থেকে বের করে দিতে চেষ্টা চালান। কিন্তু সাংবাদিকদের উপস্থিতির কারণে তেমন একটা সুযোগ নিতে পারেননি। পরক্ষণে শাহ আলমের দুই ক্যাডার জামাল হোসেন মিঠু ও মোস্তাফিজুর রহমান পিংকু এসেও তরুণীকে ভয়ভীতি দেখান। তবে এতেও সফল না হয়ে সরদার শাহ আলম স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জোরপূর্বক জেলা পরিষদের ভবন ত্যাগ করার চেষ্টা করেন।
যদিও ওই সময় ছাত্রলীগ নেত্রী অর্থাৎ প্রাক্তন প্রেমিকা নাদিরা তাকে মাঝপথে রহিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষাবধি তাকে আটকে রাখতে পারেননি। দুই ক্যাডারের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান শাহ আলম স্ত্রীকে নিয়ে গাড়িযোগে স্থান ত্যাগ করেন। ওই সময় অভিমানী ছাত্রলীগ নেত্রী রাগে ক্ষোভে জেলা পরিষদের ছাদে দৌড়ে ওঠে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু সংবাদকর্মী ও স্থানীয়রা তাকে ধরে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেত্রী ফারজানা ববি নাদিরা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন বিষয়টি সমঝোতায় যেতে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিয়ে ব্যতীত সমঝোতায় যাওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া বিষয়টি তিনি তাদের রাজনৈতিক অভিভাবক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে অবহিত করেছেন। মূলত এই নেতা তাকে যে দিকনির্দেশনা দেবেন সেই আলোকেই নাদিরা আগামী দিনে পথ হাটবেন।
এই পুরো বিষয়টি সংবাদপত্রের কল্যাণে পুলিশ প্রশাসন নিশ্চিত হলেও আপাতত কোন ভূমিকা লক্ষ্যণীয় নয়। এক্ষেত্রে জেলা পুলিশ সুপার জোবায়দুর রহমানের ভাষ্য হচ্ছে- এই ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। যে কারণে পুলিশ কোন ধরণের পদক্ষেপ রাখেনি।’’