ধর্ম ডেস্ক;অন্যায় হত্যা একটি জঘন্যতম অপরাধ। এ অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি। তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দ। এ অপছন্দের মাত্রা এতই কঠিন যে, আল্লাহ হত্যাকারীকে কিছুতেই নিষ্কৃতি প্রদান করবেন না। সাতটি বড় কবিরা গুনাহের মধ্যে অন্যায় হত্যা শিরকের পরেই দুই নম্বরের বড় অপরাধ। ভয়ংকর এ গুনাহের মাত্রা ব্যক্ত করতে যেয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘যে কোনো মানুষকে হত্যার বদলা ছাড়া বা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া অন্যায়ভাবে হত্যা করলো; সে যেন গোটা পৃথিবীর মানুষকেই হত্যা করলো।’ (সূরা মায়েদা: ৩২)।
মুফাসসিরীনে কেরামের মতে, ‘গোটা পৃথিবীবাসী সকলে মিলে একজন মানুষ তৈরি করতে পারবে কিনা? উত্তর তো অবশ্যই হবে না। তাহলে সেখান থেকে চিন্তা করলেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, গোটা পৃথিবীবাসী একজন মানুষ না বানাতে পারলে আল্লাহ যাকে বানিয়েছেন সে মানুষটিকে হত্যা করে; সে যেন সকলকেই হত্যা করলো।’
তাই এ অপরাধ ক্ষমাহীন। এমন হত্যাকারী চিরকালীন জাহান্নামী। অনন্তকাল তাকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতেই হবে। এজন্য অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়াল বলেছেন, ‘আর যে ইচ্ছাকৃত কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আযাব প্রস্তুত করে রাখবেন।’ (সুরা আন নিসা: ৯৩)
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি [আল্লাহর অবাধ্যাচরণ] এবং তার সঙ্গে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৬০৪৫, ৭০৭৬; তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯৮৩)
অথচ আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি আমাদের সমাজ ও জাতি এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়ে গেছে যে, এহেন পাপ ও তার ভয়াবহ পরিণতির কথা হত্যাকারীরা বেমালুম ভুলে গেছে। নতুবা মানুষ হয়ে মানুষ কিভাবে অপর মানুষকে হত্যা করে? কি করে হৃদয় এদের এত পাষাণ হল? একবারও কি এদের হৃদকম্পন আসে না, যে আল্লাহর স্নেহের সৃষ্টি এ মানুষকে কিভাবে হত্যা করি? আমার মতো তারও তো একটা জীবন বোধ আছে? আছে প্রাণের টুকরা ছেলে-মেয়ে, আছে জীবন প্রেয়সী, আছে জীবনের অনেক পরিকল্পনা ও চাহিদা।
কিয়ামতের দিন মানুষ হত্যার বিচার করা হবে সর্বাগ্রে, তারপর অন্যান্য অপরাধের শাস্তি হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফায়সালা হবে, তা হলো রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।’
অপর হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মানুষ যদি অন্যায় হত্যার ব্যাপারে মুখ দিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ করে না ,তাহলে হাশরের দিন ঐ ব্যক্তির কপালে লেখা থাকবে ঐ ব্যক্তি আল্লাহর দয়ার চাদর থেকে বঞ্চিত।’(আক্বিদাতুর রাসুল। ইমাম কুরতুবী)