নিউজ ডেস্কঃ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের খোঁজ খবর তো আমরা মোটামুটি সবাই রাখি। কিন্তু অনবদ্য সব দলগত আর ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে জঘন্য পারফরমেন্সগুলো হয়ত ঢাকাই পড়ে যায়। এবার যেমন সেরকম শঙ্কায় আছে সৌদি আরব! এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে নিচের র্যাংকিং এর দল রাশিয়ার সাথেই সবুজ সেনানীদের হজম করতে হয়েছে ৫ গোল! গ্রুপের শেষ ম্যাচে লড়তে হবে আবার সুয়ারেজ, কাভানিদের মত তারকা নির্ভর উরুগুয়ের বিপক্ষে। আর গ্রুপে সৌদির দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্বল প্রতিপক্ষ পেয়ে যদি জ্বলে ওঠেন মিশরের মোহাম্মদ সালাহ, তবে যে কি অবস্থা হবে তা হয়ত সৌদি খেলোয়াড়রা কল্পনায়ও স্থান দিতে চাইবে না। সেসব হিসেব নিকেশ মিলবে গ্রুপ পর্ব শেষ হলে পরে । আপাতত বিশ্বকাপের ইতিহাসের জঘন্যতম পাঁচ দলের পারফর্মেন্স বিশ্লেষণ করা যাক !
জায়ার ( ১৯৭৪)
পয়েন্ট: ০, গোল ব্যবধানঃ ১৪
হাস্যকর এক কাহিনী রয়েছে ১৯৭৪ সালের সেই জায়ার ফুটবল দলকে নিয়ে। তারাই ছিল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা প্রথম সাব-সাহারান দল। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ গোলের হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা জায়ার কল্পনাও করতে পারেনি পরের ম্যাচে কি দুর্ভোগই না অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে ৯-০ গোলের হার যে বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম বড় ব্যবধানের পরাজয় হয়ে আছে আজও! জায়ারে তখন ক্ষমতায় রয়েছেন অত্যাচারী স্বৈরশাসক মোবুতু সেস সেকো। নিজের দেশের এই লজ্জা তিনি সহ্য করবেনই বা কেন? ব্রাজিলের বিপক্ষে শেষ গ্রুপ ম্যাচের আগে তাই ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে তিনি ঘোষণা দেন- ঘরে ফিরতে চাইলে কিছুতেই ৩ গোলের বেশি ব্যবধানে হারা চলবে না! তো সেই ম্যাচে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরে যখন পোস্টের মাত্র বিশ গজ দূর থেকে ফ্রি-কিক পায় ব্রাজিল, জায়ারের ফুটবলারদের মধ্যে কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়। অদ্ভুতভাবে সময় নষ্ট করার ছুতো খুঁজতে থাকেন নিরীহ ফুটবলাররা; কি আর করবেন, বিশ্বকাপ খেলতে এসে এখন যে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফেরাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাদের জন্য! যাই হোক, ৩-০ গোলে সেই ম্যাচ হেরে বাড়িতে ঠিকই ফিরতে পেরেছিলেন আফ্রিকান দেশটির ফুটবলাররা কিন্তু মোবুতু তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন। আর সেই জায়ার টিমের কপালে জোটে বিশ্বকাপের সবথেকে বাজে দলের তকমা।
ক্রাইম ফোকাস.নেট উৎসুক এবং বিনোদনপ্রিয় পাঠকরা ইউটিউবে চাইলে দেখে নিতে পারেন ১৯৭৪ এর সেই ব্রাজিল-জায়ার ম্যাচের ফ্রিকিকের ভিডিও ক্লিপটি। এরকম বিনোদনের খোরাক ফুটবলাররা প্রতিদিন জন্ম দেন না, হলপ করে বলতে পারি!
এল সালভাদর (১৯৮২)
পয়েন্ট: ০, গোল ব্যবধানঃ ১২
যুদ্ধবিদ্ধস্ত এল সালভাদরেরে `৮২ সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা শুরু হয়েছিলো হাংগেরির বিপক্ষে ১০-১ গোলের বিশাল পরাজয় দিয়ে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক ম্যাচে এর থেকে বেশি গোল খাওয়ার রেকর্ড নেই কারো! তাদের ৩৬ বছর বয়সী ম্যানেজার মরিসিও রদ্রিগেজ বরখাস্ত হন এবং আর কখনোই কোন দলের কোচ হতে পারেন নি। আসলে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির অপ-রাজনীতির বলি হতে হয়েছিলো ফুটবলারদের। প্রথম ম্যাচের মাত্র তিন দিন আগে দলটি স্পেনে পৌছায়। ছিল না অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত বল এবং ট্র্যাকসুট। এত টানাপোড়েনের পরেও দলটি বিশ্বকাপ বাছাই উতরানোর যোগ্যতা অর্জন করে- এটিই তাদের কাছে ছিল বড় পাওয়া। যাই হোক , হাংগেরির বিপক্ষে ষেই লজ্জার পরাজয়ের পর তারা ভালোই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো বলতেই হবে। হ্যাঁ, অমন শোচনীয় পরাজয়ের পর বেলজিয়ামের বিপক্ষে ১-০ এবং আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২-০ গোলের হারকে তো গুড কামব্যাকই বলা যায়!
তখনকার এল সালভাদর মিডফিল্ডার মরিসিও আলফারোর ভাষ্যমতে, ” আমাদের দেশটা তখন ছিল গভীর দুর্ভোগে নিমজ্জিত, আর আমাদের উপর চাপ ছিলো সবাইকে এ অবস্থা থেকে একটুখানি পরিত্রাণ দেয়ার।” তবে যাই হোক, শেষমেশ যে চূড়ান্ত অপমান নিয়েই ঘরে ফিরেছিলো এল সালভাদর দল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সৌদি আরব (২০০২)
পয়েন্ট: ০, গোল ব্যবধান -১২
এবারের বিশ্বকাপে সৌদি আরব নতুন করে বাজে দলের তালিকায় নাম লেখাবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু ২০০২ বিশ্বকাপের জঘন্য পারফরমেন্স দিয়ে তারা কিন্তু এরই মধ্যে রয়েছে বিশ্বকাপের সবচেয়ে জঘন্য দলগুলোর তালিকায়! তাদের সেই বিশ্বকাপ পারফরমেন্সের তরজমা করার আগে একটু জানিয়ে রাখি , ২০০২ এর সেই জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের খেলায় এই সৌদি আরবের কাছেই কিন্তু ৬-০ গোলের লজ্জা পেয়েছিলো আমাদের বাংলাদেশ। হয়তো আমাদের হয়ে সৌদি আরবকে লজ্জাটা ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলো অলিভার কানের জার্মানি! নয়তো কেউ কাউকে অমন নাকানি চুবানি দেয় ! মিরোশ্লাভ ক্লোসার হ্যাট্রিকে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদিকে ৮-০ গোলে রীতিমত উড়িয়ে দেয় জার্মানরা। পরের দুই ম্যাচে ক্যামেরুনের সাথে ১-০ আর আয়ারল্যান্ডের সাথে ৩-০ গোলের পরাজয় যেন ছিল নাসের আল জোহর এর সৈন্যদের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা। কোন গোল না দিয়েই সবার আগে ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে বাড়ির প্লেন ধরে সৌদি আরব।
চীন (২০০২)
পয়েন্ট: ০, গোল ব্যবধান: ৯
ফুটবলে পরাশক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা চৈনিকদের আজকের নয়। কিন্তু ২০০২ এর জাপান- কোরিয়া বিশ্বকাপটা ভুলেই যেতে চাইবে তারা। অবশ্য বেচারাদের তেমন দোষও দেয়া যায় না, তাদের গ্রুপে যে ছিলো সেই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল এবং সেমিফাইনালিস্ট তুরস্ক। ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-০ গোলের অসহায় আত্মসমর্পণ করে তারা। কোস্টা রিকার বিপক্ষে ২-০ এবং তুরস্কের বিপক্ষে ৩-০ গোলের হারেই হয়ে যায় গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ এর চৈনিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি।
উত্তর কোরিয়া (২০১০)
পয়েন্ট: ০, গোল ব্যবধান- ১১
২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে কৌতুকের ষোলকলা পূর্ণ করে উত্তর কোরিয়া। ফেবারিট ব্রাজিলের বিপক্ষে ২-১ গোলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচের পর কোরিয়া কোচ কিম জং হূন ফাঁস করে দেন , ম্যাচ চলাকালে তার এবং তার শিষ্যদের সাথে গোপন ডিভাইসের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন তখনকার স্বৈরশাসক কিম জঙ ইল! যা হোক, ব্রাজিলের বিপক্ষে আশা জাগানিয়া শুরুর পর ইল অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েন। ভাবেন, ব্রাজিলকেই যখন ঘোল খাওয়ানো গেছে পরের ম্যাচে পর্তুগালকে নিশ্চয় হারানো যাবে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ম্যাচটি উত্তর কোরিয়ান টেলিভিশনে সরাসরি দেখানো হবে। উল্লেখ্য, এর আগে উত্তর কোরিয়ার মানুষ সরাসরি বিশ্বকাপ খেলা উপভোগ করতে পারত না। কিন্তু বিধি বাম, নয়তো উত্তর কোরিয়ানদের জন্য এমন ঐতিহাসিক ম্যাচেই পর্তুগাল তাদের ৭-০ গোলের লজ্জা দেয়! শেষ ম্যাচে আইভরিকোস্টের সাথে ৩-০ গোলে পরাজয়ের লজ্জা নিয়ে বাড়ি ফেরে উত্তর কোরিয়ান দল।