পাবনা প্রতিনিধি:ভোক্তারা বিষ খাচ্ছে একভাবে আর কৃষক দু’ভাবে। ফসল উৎপাদনের সময় কৃষক বিষের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রথমবার আর দ্বিতীয়বার হচ্ছে খাদ্য গ্রহণে। বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য দেশের মানুষের কাছে নিরাপদ তথা বিষমুক্ত খাদ্য পৌঁছে দেয়া। তবে নিরাপদ খাদ্য পেতে হলে চাষিদেরও আর্থিক নিরাপত্তা দিতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটি আয়োজিত চাষিদের মিলনমেলায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সোসাইটির ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার আয়োজনে পাবনার পাকশীতে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ও লালনশাহ জোড়া সেতু সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিচয় পর্ব, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াত কৃষকদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানস্থল নানা কৃষিপণ্য দিয়ে সাজানো হয়।
চাষিরা বক্তব্যে বলেন, দেশের বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও টকশোতে জনপ্রতিনিধিরা যখন বক্তব্য দেন তখন মনে হয় চাষির জন্য বিরাট কল্যাণকর কিছু হতে যাচ্ছে। বাস্তবে চাষির কল্যাণে তেমন কিছুই হয় না। চাষের উপকরণের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও চাষি নায্যমূল্য পাচ্ছে না। শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই চলেছে। এক্ষেত্রে প্রান্তিক চাষিদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ।
তারা বলেন, এখন ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃষিপণ্য কেনে। চাষিদের টিকে থাকার জন্য তাদেরও অধিকার সচেতন হতে হবে।
তারা বলেন, আগামীতে ধানের নায্যমূল্য না পেলে চাষিরা আর ধান উৎপাদন করবে না।কৃষক ফসলের যেমন নায্যমূল্য পাচ্ছেন না তেমনি তারা দেশের মানুষের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও সামাজিক মর্যাদা পাচ্ছেন না।
বক্তারা কৃষককে ‘কৃষিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সন্তানদের জন্যও সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের দাবি জানান। তারা জানান, চাষিকে বাঁচাতে হলে প্রকৃত চাষিদের জন্য ভর্তুকি বাড়াতে হবে।
চাষিরা তাদের বক্তব্যে বাজেট প্রণয়নে কৃষকের মতামতকে প্রাধান্য দেয়ার দাবি জানান।
তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও সবজি ও ধান ,পাট, আখ, কাউন, চিনাবাদাম, গম, আলু, পিয়াজসহ বিভিন্ন আবাদ করা হলেও বছরের পর বছর সে ফসল চাষে কৃষক মার খাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকের লালিত স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে বহু প্রান্তিক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান কূল ময়েজ।
ঈশ্বরদী পৌরসভার কাউন্সিলর (রসুন চাষি) আবুল হাসেমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুল মোমিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল কিতাব মন্ডল, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক আশরাফ আলী ডুবুরী, পদকপ্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মদ, হাসান আলী, আতিকুর রহমান আতিক, হাবিবুর রহমান মৎস্য হাবিব, জাহিদুল ইসলাম গাজর জাহিদ, স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত কৃষক বেলি বেগম, ফিরোজ আহমেদ বাকি, রবিউল ইসলাম রবি, মৎস্য চাষি আবু তালেব জোয়ার্দ্দার, মৎস্য চাষি কবির মালিথা, আনোয়ার হোসেন রিপন, শিল্পী বেগম, জিয়াউর রহমান শাহ ও রফিকুল ইসলাম বকুল।
আলোচনা পর্ব শেষে চাষিদের ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও বিষের কুফল তুলে ধরে জৈব সার ও জৈব বালাই নাশক ব্যবহারের উপকারিতা তুলে ধরে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।