রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

রাজশাহীর বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের ঢল

ক্রাইম ফোকাস ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৮ জুন, ২০১৮
  • ১১৩ বার পড়া হয়েছে

দেশের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যা দেখা দিলেও রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে প্রলম্বিত খরা। ঈদের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই রাজশাহী অঞ্চল সূর্য তাপে পুড়ছে। এমনকি এবারে আষাঢ় মাসেও দেখা মেলেনি বৃষ্টির।

আষাঢ়ের প্রথম দিনেই দেখা দেয় তাপের রূদ্রমূর্তি। প্রকৃতি যেন আগুনের রুপ নিয়েছে। বৃষ্টির ছিটেফোটাও ঝরেনি সেদিন। এদিন বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ উঠে।

আষাঢ়ের ২য় দিনই ঈদ। প্রচণ্ড গরম আর আগুন ঝরা সূর্যের তির্যক রশ্মিতে বোঝার উপাই নেই ধরায় আষাঢ় নেমেছে। সকাল থেকে প্রখর রোদ। গরমও ধারণ করেছে চরম আকার। এর মধ্যেই চলছে ঈদের ছুটি। এক মাস রমজান শেষে ঈদের জামাতের পর বিকেল পর্যন্ত গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে গরমের চাপে।

ঈদের দিন বিকেল তারপর সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা থেকে রাত ভ্যাপসা গরমে ছিল অতিষ্ঠ মানুষ। কিন্তু তারপরেও খরতাপ ঠেলে বিনোদনপ্রেমী মানুষ পা বাড়িয়েছেন বাইরে। এজন্য ঈদের দিনের বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন রবিবার ও সোমবার সকাল থেকে রাজশাহীর বিনোদনকেন্দ্রে ঢল নামে মানুষের। ভাদ্রের এই ভ্যাপসা গরম তাদের ঘরে বাঁধতে পারেনি।

পরিবার-পরিজন কিংবা প্রিয়জন নিয়ে সবাই ভিড় জমাচ্ছেন রাজশাহীর সবচেয়ে বড় বিনোদন কেন্দ্র শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায়। কেবল শহর থেকেই নয়, দূর-দূরান্ত থেকে বাস কিংবা মিনিট্রাক ভাড়া করেও দলবেঁধে এখানে ছুটে আসছেন ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে। তাই ঈদের দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা।

দুপুরের পর থেকেই বাড়ছে দর্শনার্থীর ভীড়। রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ছাড়াও জিয়া শিশু পার্ক, ভদ্রা পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের সমান ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের ছুটিতে রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা মানুষগুলোও দীর্ঘদিন পর পরিবার নিয়ে বের হয়েছেন। সন্ধ্যায় রাজশাহীর পদ্মাপাড় যেন হয়ে উঠে বিনোদনের প্রধান কেন্দ্র।

সোমবার (১৮ জুন) সকাল থেকেই শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। বাড়তি বিনোদনের জন্য দর্শনার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে এখানে এসেছেন। সকাল গড়িয়ে বিকেল হতেই কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। তবে চিড়িয়াখানায় এসে সেরকম পশু পাখি না থাকায় অনেকে হতাশ হয়েছেন। তাদের মতে বড়দের বিনোদনে অন্য কিছু থাকতে পারে কিন্তু ছোটদের বিনোদনে অবশ্যই প্রকৃতি এবং বাঘ ভাল্লুক সিংহসহ পশু পাখি থাকা আবশ্যক। তবে বিনোদন ও ভাললাগার জন্য বৈরী আবহাওয়া হলেও বেড়াতে আসতে পেরে ছোটরা মহাখুশি।

বিশেষ করে রাস্তা ঠেলে যারা শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানে ঢুকতে পেরেছেন তাদের আসলে খরতাপ ও গরম কোনটায় অতিষ্ট করবে না। উদ্যানের সবুজ নির্মল পরিবেশে সবাই যেন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে না মোটেও। ছোটরা বাঁধভাঙা আনন্দের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন রাইডস উপভোগ করছে। কেউ রঙিন রঙিন গাড়ি চালাচ্ছে, কেউ দোলনায় উঠছে কেউ আবার লোহার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে পিচ্ছিল পাতে বসে চোখের পলকেই সুড় সুড় করে নিচে নামছে।

বড়রাও কম যাচ্ছে না। উদ্যানের কৃত্রিম খালের সবুজ টলটলে পানিতে থাকা বোট নিয়ে ঘুরছেন। জলকেলিতে মেতে উঠছেন, কৃত্রিম পাহাড়ে চড়ছেন। কেউ আবার সবুজ বেষ্টনীতে ঘেরা বেঞ্চের ওপর বসে হাওয়া খাচ্ছেন। উদ্যানের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত হেঁটে সাবার অনন্দ উদযাপনের দৃশ্য উপভোগ করছেন কেউ কেউ।

রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার তত্ববধায়ক ডা. ফরহাদ উদ্দিন ঈদ উপলক্ষে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটছে এখানে। প্রথম দিন ভিড় একটু কম থাকলেও আজ বেশি।

এছাড়াও নগরীর প্রধান বিনোদনকেন্দ্র পদ্মার ধার, শহীদ জিয়া শিশু পার্কে সকাল থেকেই মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। রং-বেরঙের পোশাক পড়ে তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোরসহ সকল শ্রেণির মানুষ ছুটে আসেন বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন স্থানের মানুষের সমাগম হয়েছে এসব স্থানগুলোতে। ঈদের ছুটিতে রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা মানুষগুলোও দীর্ঘদিন পর এসে আনন্দ উপভোগ করতে আসছেন পরিবার নিয়ে।

ঈদের তৃতীয় দিন সোমবার রাজশাহীর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বন্ধু-বান্ধবের সাথে ছবি তোলা, প্রিয়জনের সাথে হাঁটা, বিভিন্ন ধরণের খাবার খাওয়া, নৌকায় ঘুরে বেড়ানো নিয়ে যেন মেতে উঠেছে। পানিতে পা ডুবিয়ে কেউ চলছে পদ্মার নতুন পানিতে নৌকা ভ্রমণে। আবার কেউ আদরের ছোট্ট সন্তানটিকে নিয়ে এসেছেন মজার মজার খেলাঘর দেখাতে।

নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় নির্মিত শহীদ জিয়া শিশু পার্কে সকালে প্রচণ্ড রোদের প্রভাব থাকায় তেমন দর্শনার্থীদের ভিড় না থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেখানে শত-শত মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। এছাড়াও ভদ্রা পার্কেও ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। ছোট শিশুদের পদচারণায় পার্কগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

সবথেকে বেশি জনসমাগম ঘটে নগরীর প্রধান বিনোদন কেন্দ্র পদ্মা পাড়ে। সকাল থেকেই সেখানে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রোদ-তাপ উপেক্ষা করেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পদ্মার পাড়ে ভিড় জমাচ্ছেন। রোদের মাত্রা বেশি থাকায় অন্যান্য স্থান থেকে নদীর পাড়কেই বেশি বেছে নিচ্ছেন বিনোদন পিপাসুরা। অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা এড়াতে প্রত্যেকটি বিনোদনকেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।

এদিকে রাজশাহীর অঞ্চলের আশপাশে গ্রামের সবুজ প্রান্তে গড়ে উঠেছে ছোট বড় একাধিক বিনোদন কেন্দ্র। শহরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি গ্রামে গড়ে উঠা বিনোদন কেন্দ্রওগুলোতে ঈদে বিনোদন পিয়াসীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। গ্রামে সবুজপ্রান্তে একটু মুক্ত হাওয়া নিতেই দুরদুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর