বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০২:৪৭ অপরাহ্ন

মঙ্গলই কি তবে আমাদের আদি জন্মভূমি?

ক্রাইম ফোকাস ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৮ জুন, ২০১৮
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্কঃগত সপ্তাহে নাসার মঙ্গলযান ‘কিউরিওসিটি’ মঙ্গলের পৃষ্ঠের ৫ সেন্টিমিটারের মধ্যে ৩০০ কোটি বছরের পুরনো জৈব অণু সমৃদ্ধ একটি পাললিক শিলার অস্তিত্ব নিশ্চিত করে। এই আবিষ্কারটি ‘মঙ্গলেই প্রথম প্রাণের উৎসারণ হয়েছে কিনা’ বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ ধরণের বিতর্ককে আরো উস্কে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।

গত সপ্তাহের সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অংশে আরো বলা হয়, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের মিথেনের মধ্যে খুবই সামান্য পরিমাণে ঋতুগত পরিবর্তন শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে কিউরিওসিটি।

কিন্তু কোটি টাকার কতগুলো প্রশ্ন হচ্ছে, মঙ্গলে যদি প্রাণের সঞ্চার হয়েই থাকে, তবে কি তা এমনই স্বাধীনভাবে হয়েছিল? মঙ্গলের সঙ্গে শিলা ও প্রাণের বিনিময়ের মাধ্যমেই কি তৈরি হয়েছিল পৃথিবী নামক গ্রহের? এগুলো আসলে চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ধাঁধা। প্রশ্নগুলো রাখছিলেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিজ্ঞানী জোনাথন লুনিন।

অনেক জ্যোতিপ্রাণীবিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণ করা গেলে ‘পৃথিবীই যে প্রাণের একমাত্র উৎস নয়’ এ সত্যটি প্রতিষ্ঠা করা অনেক সহজ সাধ্য হবে।

কিউরিওসিটি মঙ্গলের ‘গেল ক্র্যাটারে’ (ক্র্যাটার মানে হোল গর্ত) জৈব স্বর্ণের পিণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার কারণ হল ক্র্যাটারটি সম্ভবত একটি পরিত্যক্ত হ্রদ। এরকম পরিবেশ জৈব অণুসমূহের জমাট বেধে সংরক্ষিত হওয়ার জন্য একেবারে আদর্শ , লুইনিন বলেন। নাসা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, খুঁজে পাওয়া জৈব পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে থায়োফিন, বেঞ্জিন, টলুইন। আরো রয়েছে প্রোপেন ও বিউটেন এর মত ক্ষুদ্র কার্বন শিকল বিশিষ্ট জৈব যৌগসমূহ। জৈব পদার্থগুলো জমাট রাখার জন্য সালফার এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, তার মানে হল এসব পদার্থ বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে মাটিতে চাপা থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই।

লুইনিন বলেন, এর মানে হচ্ছে মঙ্গল থেকে প্রাণ বিলুপ্ত হওয়ার আগে সেখানে কোটি কোটি বছর প্রাণীরা টিকে ছিল, এরও সম্ভাবনা রয়েছে। এবং পরে সম্ভবত মঙ্গলের সঙ্গে অণুজীব আদান প্রদান হয়ে থাকতে পারে পৃথিবীর।

কিন্তু এই দুইটি গ্রহের মধ্যে মঙ্গলেই কি আগে প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল?

অধ্যাপক লুইনিন বলেন, ‘‘এই প্রশ্নটা একটি উভয় সংকট। বিভিন্ন জিনিস আদান প্রদানের জন্য মঙ্গল এবং পৃথিবী- সৌরজগতের এই দুইটি গ্রহ বেশ কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত।’’

কিন্তু মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল অরক্ষিত হওয়ায় সূর্য থেকে আশা অতি বেগুনি রশ্মি এবং অন্যান্য মহাজাগতিক তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবে মঙ্গলের জীব জগত ধ্বংস হয়ে যায়। তখন মঙ্গলের সেই অণুজীবরা পৃথিবীতে স্থানান্তরিত হয়, এমন সম্ভাবনা থাকলেও মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে এসেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তারা কিভাবে খাপ খাইয়ে নিলো সেটি বিশাল এক প্রশ্ন।

তাই লুইনিন বলেন, মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চারণ হয়েছিলো কিনা সে প্রশ্নের নির্ভরযোগ্য কোন উত্তর দেয়া এখনই সম্ভব নয়। দূরত্বের হিসেব করলে শনির একটি উপগ্রহের সঙ্গেই মঙ্গলের প্রাণের বিনিময়য় যুক্তিযুক্ত মনে হয়।

নাসা বলছে কিউরিওসিটির খুঁজে পাওয়া জৈব বস্তুগুলোর উৎসের কোন সন্ধান পাওয়া না গেলেও, এটা নিশ্চিত যে, গেইল ক্র্যাটারে প্রাণের বিকাশের জন্য সব ধরণের উপাদানই বিদ্যমান ছিল। আসলে সবচেয়ে পারফেক্ট উত্তরটি পাওয়া যাবে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের মিথেনে কার্বনের আইসোটপিক অনুপাত যদি হিসেব করা যায় তখন। তাহলেই জানা যাবে এই মিথেন কি পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইডের বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি অথবা কোন জৈবিক প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন?

উল্লেখ্য, নাসার মঙ্গল-২০২০ যানটি ২০২১ এ মঙ্গলে গিয়ে পৌঁছাবে এবং এতে মিলিমিটার স্কেলে জৈবিক অস্তিত্ব মাপার সুবিধা রয়েছে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মঙ্গল যান এক্সোমারস মঙ্গলের একটি মিথেন মানচিত্র তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ধারণা করা হয়, মোটামুটি ৩০০ কোটি বছর আগেও , মঙ্গলের গর্তগুলো পানি পূর্ণ ছিল, আকাশ ছিল পৃথিবীর মতো নীল এবং বায়ুমণ্ডল ছিল অনেক ঘন। তার কতটা এখনো অবশিষ্ট আছে তার কৌতূহল মেটানোর জন্য আমাদের আরো বেশ কিছু বছর অপেক্ষা করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর