লাইফস্টাইল ডেস্ক: জুন মাসের তৃতীয় রবিবার প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বের প্রতিটি বাবাই চায় তার সন্তানের হাসি মুখ, স্ত্রী-র সুখ বা বাবা-মায়ের আনন্দ।
তবে পরিবারকে ভাল রাখতে গেলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন বাড়ির খুদে সদস্যকে আনন্দে রাখা। প্যারেন্টিংয়ের সে সব খুঁটিনাটি জেনে এই বাবা দিবসে হয়ে উঠুন ‘সবচেয়ে ভাল বাবা’।
সিগারেটে না: ভাল বাবা হয়ে ওঠার প্রথম শর্তই কিন্তু এটা। তামাকে থাকা নিকোটিন, ফর্ম্যালডিহাইড, সীসা, আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক আপনার ক্ষতি তো করছেই, সঙ্গে প্যাসিভ স্মোকিংয়ের শিকার হচ্ছে আপনারই সন্তান। তা থেকে নিজে তো দূরে থাকুনই, নিরাপদে দূরত্বে রাখুন সন্তানকেও।
পরিমিত মদ্যপানও নয়: ‘আ’য়্যাম আ সোশ্যাল ড্রিঙ্কার’— এ কথার মধ্যে কিন্তু কোনও গুণ নেই। ভাল অভিভাবক হতে গেলে প্রথমেই মাথায় গাঁথুন এটা। আধুনিক চিকিৎসা অনুযায়ী নিয়মিত ভাবে পরিমিত মদ্যপানও শরীরের ক্ষতি করে। যে ক্ষেত্রে সামান্য বাড়াবাড়ি হলেই লিভারের ক্ষতি, ক্যানসারের মতো ভয়াবহতা ঘাপটি মেরে আছে, তাকে আঁকড়ে থাকবেনই বা কেন?
কড়া শাসন বাদ: রগচটা হলে, বা সহজে রেগে গেলে সে রাগের প্রকাশ দেখান অন্যত্র। সন্তানের উপর নিজের হতাশার রাগ চাপিয়ে দেবেন না প্লিজ। বরং তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। মতবিরোধ এলেও কথা বলুন খোলা মনে। শাসন প্রয়োজন। তবে অতি শাসনে কিন্তু সমস্যা বাড়তে পারে।
সময় দিন পরিবারকে: ছুটি পেয়েছেন দিন দু’য়েক? চট করে গুছিয়ে ফেলুন ব্যাকপ্যাক। পরিবারকে নিয়ে ঘুরে আসুন কাছাকাছি কোথাও। সন্তানের ভাল লাগবে এমন জায়গাই বাছুন। প্রকৃতির মাঝে থাকলে তার মন ভাল থাকার সঙ্গে ভাবনা-চিন্তাতেও অভিনবত্ব আসবে।
গুণের কদর করুন: সন্তান কোনও কিছুতে বেশ ভাল? তা জীবনে কাজে লাগুক বা না লাগুক, প্রশংসা করুন। সব গুণই যে ‘ক্যারিয়ার’ হয়ে উঠবে এমন কিন্তু নয়। তাতে গুণের কদর কমে না। বরং বাবার কাছ তেকে নিজের ভাল লাগার কাজে উৎসাহ পেলে মানসিক শান্তি পাবে সন্তান।
তুলনা করবেন না: পাশের বাড়ির বুল্টির মাধ্যমিকের রেজাল্ট হোক বা বন্ধুর মেয়ের ঘ্যামা চাকরি, কোনও কিছুর সঙ্গেই তুলনা করবেন না নিজের সন্তানের পারফর্ম্যান্সের। যে কোনও রেজাল্ট বা চাকরির চেয়ে জীবন অনেক বড়। সন্তানের জীবন সুন্দর করতে পরামর্শ দিতেই পারেন, কিন্তু তুলনা নয়। এতে তার হীনমন্যতা বাড়বে।
বন্ধু হোন: এটা অন্যতম জরুরি বিষয়। যদি অভিভাবকত্ব দেখাতে গিয়ে বন্ধু না হয়ে উঠতে পারেন তা হলে সে দায় আপনার। সন্তানের সঙ্গে এমন ভাবে মিশুন, যেন সে আপনাকে ‘বাবা’ হিসেবে সম্মানের পাশাপাশি ‘বন্ধু’-ও ভাবতে পারে। প্রয়োজনে কথা ভাগ করতে পারে আপনার সঙ্গে। এতে সে বাড়িতেই পাবে জীবনের সেরা বন্ধু।
সাহায্য করুন লেখাপড়ায়: সময় বের করুন সন্তানের লেখাপড়ার জন্য। টুকটাক হোম টাস্ক দেখিয়ে দিন। দরকারে পড়া ধরুন। এই দায়িত্ব স্ত্রী-র হাতে থাকলে মাঝে মাঝেই সাহায্য করুন তাকে। এতে সন্তান তার প্রতি আপনার যত্ন ও সচেতনতা উপলব্ধি করতে পারবে। এতে দৃঢ় হবে পারিবারিক বন্ধন।
বিভেদ নয়: এই সমাজে সবচেয়ে জরুরি এটাই। ছেলে-মেয়ে — এই দুই সন্তানের মধ্যে কখনও বিভেদ করবেন না। দু’জনকেই বড় করুন সমান অধিকার ও ভালবাসা দিয়ে। ছেলে বা মেয়ে কেউই আপনার ব্যবহারে কোনও পক্ষপাতিত্ব যেন না টের পায়। একই কথা খাটে দুই ছেলে বা দুই মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রেও।
ত্যাগ স্বীকার করুন: বাবা-মা হওয়ার প্রাথমিক শর্তই কিন্তু এটা। যে কোনও সন্তানের জন্যই অভিভাবকদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আপনার জন্যও আপনার মা-বাবা কখনও না কখনও তা করেছেন। সন্তানের হাসি মুখ দেখতে গিয়ে নিজের টুকিটাকি কিছু ছাড়তে হলে তাকে নিয়ে মন খারাপ করবেন না।