নিউজ ডেস্কঃ ঈদের বাতাস বইছে চারধারে। কেমন সুখ সুখ পরিবশ বিরাজিত শহরে, নগরে। আনন্দে উদ্বেল হয়ে আছে আমাদের মন কখন উঁকি দেবে চাঁদ মামা। খুশীর ফেরারী হয়ে ছুঁটে যাবো ঈদগাহে। নামাজ আদায় করে একদম নিষ্কুলষ হয়ে ফিরে আসবো ঘরে। রাসূল (সা.) এক হাদীসে বলেছেন, যারা সারা মাস নিয়মিত রোজা রেখে সমস্ত ফরজ আদায় করেছে ঈদ তাদের।
তারা ঈদগাহ থেকে পবিত্র হয়ে হয়ে ঘরে ফেরে। ঈদের এমনতর খুশীকে ছড়িয়ে দেয় সবখানে, সবধারে। ভালোবাসা আর সম্প্রীতিতে জড়িয়ে নেয় সবাইকে।
তবে, এমন পবিত্র মহান উৎসব ঈদের নীয়ম নীতি সম্পর্কেও আমাদের জানা থাকা দরকার। জানা দরকার ঈদ সসম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি। যেন, আমাদের ইবাদতটা পূর্ণ হয়।
ঈদের নামাজ সম্পর্কে আমাদের জানা আছে। ঈদের দিন নিম্নে স্বরে তাকবীর দিতে দিতে ঈদগাহে যাওয়া। রাস্তা বদল করে করে যাওয়া। এক রাস্তা দিয়ে গেলে আরেক রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা । যা শানে ইবাদিয়্যাত তথা বান্দাদের গোলামিত্ব এবং ঐক্যের নিদর্শন। এতে মুসলমানদের যে শান আছে তা দুনিয়ার সামনে পরিস্ফুট হয়।
ঈদের নামাজের নিয়ম:
ঈদের নামাজ এমন নামাজ। যার পূর্বে আযানও নেই, একামত ও নেই। সুন্নতও নেই, নফলও নেই।
ঈদের নামাজ হচ্ছে দুই রাকাত। এ দুই রাকাত ওয়াজিব। এবং এর মধ্যে ৬টি অতিরিক্ত তাকবীর আছে সেগুলোও ওয়াজিব।
নিয়ত:
আমরা এভাবে নিয়ত করবো যে, আমরা ৬ তাকবীরের সাথে দুই রাকাত ওয়াজিব ঈদের নামাজের নিয়ত করছি। ব্যক্তি যদি মুক্তাদি হয় তবে এর সাথে এ নিয়তও করবে যে, কাবামুখি হয়ে ইমামের পেছনে ঈদের নামাজের নিয়ত করছি।
ঈদের নামাজে মোট ৬টি তাকবীর আছে। ৩ তাকবীর প্রথম রাকাতে। আর ৩ তাকবীর দ্বিতীয় রাকাতে।
আব্দুর রহমান কাসেম রাসূল (সা.) এর সাহাবীদের থেকে রেওয়ায়ত করেছেন যে, রাসূল (সা.) তার সাহাবীদের ঈদের যে পদ্ধতি শিখিয়েছেন, তা হলো, ঈদে ৬ তাকবীর।
একবার হযরত হুজাইফা (রা.) এর কাছে কেউ ঈদের তরীকা জানতে চাইলে। তিনি হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.) এর দিকে দেখিয়ে বললেন ইনি বলবেন। তখন হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর দিকে ইশারা করলেন, যার ব্যাপারে বলা হয় ইনি ইলমের ভরা পাত্র। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নামজের এ তরীকা বললেন।
অতপর, আমরা যখন নিয়ত করে হাত বেঁধে ফেলি এবং সানা পড়ি। তখন সানা পড়ার পরে ৩ তাকবীর দিবে। অর্থাৎ প্রথম তাকবীর দেয়ার পর উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে। দ্বিতীয় তাকবীরেও, দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিবে। এরপর তৃতীয় তাকবীরে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে এবার হাত বেঁধে নিবে। ইমাম সূরা ফাতেহা পাঠ করে এর সাথে সূরা মিলাবে। রুকু করবে, সিজদা করবে। এভাবে এক রাকাত যেমন অন্যান্য সাধারণ রাকাতের মতোই পুরো হয়ে গেল।
দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম প্রথমে সূরা ফাতেহা পড়ে এর সাথে সূরা মিলাবে। এবং প্রথম তাকবীর দিয়ে দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিবে। এবং আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় তাকবীরে হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিবে।
এবং তৃতীয় তাকবীরেও হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিবে। এরপর চতুর্থ তাকবীরে সরাসরি রুকুতে চলে যাবে। আমরা এটাকে এভাবে বলতে পারি যে, মোট কথা হলো রুকুতে সর্বমোট তাকবীর হলো নয়টি। প্রথম তাকবীর তো তাকবীরে তাহরীমা এরপর অতিরিক্ত তিন তাকবীর আর চতুর্থ তাকবীর হলো রুকুতে। তাহলে প্রথমে রাকাতে মোট ৫ তাকবীর হয়ে গেল। আর ২য় রাকাতে মোট ৪ তাকবীর। ৩ তাকবীর অতিরিক্ত বাকী ১তাকবীর রুকু। তো এভাবেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করবে।
এ সম্পর্কে মাসআলা অনেক। তন্মোধ্যে, একটি হলো: যদি ইমাম তাকবীরে ভুলে যায় অথবা পরে এসে নামজে কেউ শরীক হয়। যেমন ইমাম কেরাত শুরু করে দেয়ার পর কেউ আসলো সে তাকবীরে তাহরীমার পরে অতিরিক্ত ৩ তাকবীর দিয়ে ইমামের সাথে শরীক হয়ে গেল। যদি ইমাম রুকুতে থাকে আর সম্ভাবনা থাকে ইমামকে রুকু অবস্থায় পাবার, তাহলে তাকবীরে তাহরীমার পড়ে তাড়াতাড়ি ৩ টি অতিরিক্ত তাকবীর দিয়ে রুকুতে চলে যাবে ।
আর যদি এমন মনে হয় যে ইমাম রুকু থেকে ওঠে যাবে। তাহলে সরাসরি তাকবীরে তাহরীমা বলে রুকুতে চলে যেতে পারবে। যদি এক রাকাত কারো থেকে ছুটে যায় তাহলে ২য় রাকাত আলাদা পড়ারর সময় সেখানে তাকবীর বলতে পারবে।
ইমাম যদি তাকবীর ভুলে যায় তাহলে সেজাদায়ে সাহু করে নিবে। আর যদি নামাজের মধ্যে ভুল হয়ে যায় অর্থাৎ বড় রকমের কোনো সন্দেহ হয়ে যায়, খেয়াল চলে আসে তবে নামাজ ছাড়া যাবে।
ঈদের নামজ যদি কারো থেকে ছুটে যায় তাহলে এর কাযা নেই। সে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করবে। আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
ঈদের নামাজের পর দোআ করবে এরপর খুৎবা। রাসূল (সা.) যেভাবে জুমা আদায় করেছেন (যেভাবে আমরা ধারাবহিক আদায় করে আসছি) যে প্রথমে খুৎবা দেয়া হয় তারপর নামাজ। কিন্তু ঈদুল ফিতরে এ নিয়মের বিপরীত। ঈদুল ফিতরে প্রথমে দুই রাকাত নামাজ হয় এরপর খুৎবা। ঈদের নামজ ওয়াজিব। এর খুৎবা সুন্নাত। কিন্তু খুৎবা শুনা ওয়াজিব। আর দোযার ব্যাপরে ফেকাহর কিতাব সমূহে লেখা আছে, চাইলে এটি নামাজের পরেও করা যাবে এবং খুৎবার পরেও করা যাবে। তবে যদি আমরা সাধারণভাবে শরীয়তের (মেজায) প্রকৃতি দেখি, ফিকহের কিতাবসমূহ পড়ি এবং নামাজের মাসআলা- মাসয়েল দেখি তাহলে তো নামাজের পরই দোআ করা হয়। সুতরাং অতি উত্তম হলো ঈদের নামাজের পরই মোনাজাত হবে এরপর খুৎবা দেয়া হবে।
এভাবে নিয়মতান্ত্রিক নামাজ আদায়ের পর তো খুশী ভাগ করা হয়। আনন্দে মোসাফাহ করা হয়, মোআনাকাও করা হয়। এসব ঠিক আছে। কিন্তু এসবকে আবশ্যক মনে করা এবং ঈদের অংশ মনে করা উচিত নয়। আমরা তো আলহামদুলিল্লাহ মোসাফাহ, মোআনাকার জন্য শুকরিয়া আদায় করি। এতে সৌহার্দ সম্প্রীতি বেড়ে যায়। বড়োরা ছোটদের গিফ্ট দিবে। আদর মোহাব্বত করে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটিকে ঈদের নামজের এমন অংশ মনে করা যে এসব ছাড়া নামাজ/ইবাদত পূর্ণ হবে না বিষয়টি এমন নয়।