নিউজ ডেস্ক :ভ্রমণের নানা অনুষঙ্গ বা প্রকৃতির স্পর্শ আছে এমন কোনো জায়গা খুঁজে বের করতে চাইলেই প্রথমে চলে আসে নদীর কথা। যে কোনো দেশের ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রার্থিত একটা জায়গা নদী। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই, তাদের মূল পর্যটন ভাবনাটা গড়ে উঠেছে নদীকে ঘিরে। নদীর কাছে যত সহজে পৌঁছানো যায় আর যতটা নির্ভার হয়ে কিছু মুহূর্ত কাটানো যায়, সেটা অন্য কোনো জায়গায় সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
দেশের ভ্রমণপিপাসুদের বেশিরভাগই জানে না, নদী পথে বাংলাদেশ ভ্রমণ করা যায়। একবার ভাবুন তো আপনি ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, মেঘনার বুক চিড়ে নদীর মাঝের চরের সৌন্দর্য, দুই পাশের প্রকৃতির রূপলীলা, সাগরের বুকে জেগে উঠা দ্বীপের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে কখনও ট্রলারে আবার কখনও বা লঞ্চ জাহাজে ছুটে চলেছেন। কেমন হবে সেই দৃশ্যগুলো? অনেকটা কল্পনার মতো!
এই ভ্রমণের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকবে অনাবিল সৌন্দর্য! বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নৌপথে ভ্রমণ করলে আপনি দেখতে পাবেন অসংখ্য চর, দেশের একমাত্র রেল ফেরি ঘাট, নিচ থেকে যমুনা সেতুর ভিউ, যমুনা-পদ্মার মিলনস্থল, মনপুরা দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ, সন্দ্বীপ, কুতুবদীয়া দ্বীপ, মহেশখালী দ্বীপ এবং সেন্টমার্টিন।
কুড়িগ্রামের রৌমারি ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করতে পারেন। রৌমারি ঘাট থেকে রাজিবপুর যেতে হবে ট্রলারে। সেখান থেকে ট্রলারে যেতে হবে গাইবান্ধার বালাসি ঘাটে। এই বালাসি ঘাট দেশের একমাত্র রেল ফেরি ঘাট। যমুনা সেতু হওয়ার পূর্বে এই ঘাট হয়েই ফেরি দিয়ে রেল পারাপার হতো জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাটে। আপনার প্রথম দিনের যাত্রা এখানেই সমাপ্তি। বালাসিতে ক্যাম্পিং করুন। হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে হবে গাইবান্ধা সদর!
পরদিন ভোরে বালাসি থেকে সিরাজগঞ্জ সদরের ঘাটের ট্রলার যেতে হবে। কারণ সকাল ১০ টার মধ্যে সব ট্রলার ছেড়ে যায়। সিরাজগঞ্জে রাতে যাত্রা বিরতি দিয়ে পরদিন সকালে ঘাট থেকে ধরতে হবে আরিচার ট্রলার। এখান থেকেও ১০ টার আগেই সব ট্রলার ছেড়ে যায়। রাতটা এখানেই কাটাতে হবে। চাইলে ক্যাম্পিং করতে পারেন আরিচা ফেরি ঘাটে।
পরদিন যেতে হবে আরিচা থেকে চাঁদপুর। এই রুটে রিজার্ভ করে বা মালবাহী ট্রলারে যেতে হবে! তবে চাঁদপুর গিয়ে রাতেই আপনাকে মনপুরাগামী এমভি টিপু ৫ বা পানামা লঞ্চ ধরতে হবে। মনপুরা দ্বীপে একদিন ঘুরে পরদিন যেতে ট্রলারে যেতে হবে নিঝুমদ্বীপ। নিঝুমদ্বীপ দেখে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে যেতে হবে। সেখান থেকে জাহাজে সন্দ্বীপ। চাইলে সন্দ্বীপ ঘুরে দেখতে পারেন মন ভরে। এরপর জাহাজে করে চট্টগ্রাম সদরঘাট। সেখান থেকে ট্রলারে কুতুবদীয়া দ্বীপ। কুতুবদীয়া ঘুরেফিরে পরদিন চলে যান মহেশখালী।
মহেশখালি থেকে ট্রলারে কক্সবাজার যেতে হবে। তারপর রিজার্ভ বা মাছ ধরার ট্রলারে টেকনাফ। রিজার্ভ ট্রলার নিয়ে উঠতে হবে টেকনাফ জেটিতে। সেখান থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন। সেন্টমার্টিন পৌঁছে চারদিকে ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির অপূর্ব রূপ সুধা পান করুন। ২/১ দিন কাঁটিয়ে জাহাজে করে টেকনাফ ফিরে আসুন। টেকনাফ থেকে বাসে ঢাকা।
যদি এত ঝামেলায় না যেতে চান তাহলে কুড়িগ্রাম থেকে রিজার্ভ ট্রলার নিয়ে চাঁদপুর চলে আসতে পারেন! এরপর বাকি পথ উপরের মতোই। ভ্রমণের খরচ নির্ভর করবে আপনার ওপর। যদি ব্যাকপ্যাক নিয়ে ভ্রমণ করেন তাহলে খরচ হবে ৬৫০০ এর মতো। মালবাহী ট্রলারে যেতে পারলে খরচ আরো কম হবে। এছাড়া যদি আয়েশিভাবে ভ্রমণ করলে খরচ হবে ১২,০০০ টাকা। রিজার্ভ করে নিয়ে গেলে খরচ হবে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা।