বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০৩:০৪ অপরাহ্ন

ঘোষিত সময়ে বেতন হয়নি ৫৭% কারখানায় সরকার ও মালিকদের সক্রিয়তা কাম্য

ক্রাইম ফোকাস ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১৮
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

সম্পাদকীয়

প্রতি বছরের মতো এবারো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি শিল্প খাতের মালিকরা। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব শিল্প খাতের শ্রমিকদের মে মাসের বেতন পরিশোধের কথা ছিল ১০ জুন। কিন্তু শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর ৫৭ শতাংশ কারখানার শ্রমিকরা প্রতিশ্রুত সময়ে বোনাস থাক দূরে, বেতনই পাননি। নির্ধারিত সময়ে বেতন-বোনাস না দেয়ার ঘটনা নতুন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মালিকদের উদাসীনতার কারণে এমনটি ঘটে। তবে এ কথাও সত্য, কিছু ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। রফতানি আদেশ বাতিল, ব্যাংক থেকে সময়মতো অর্থ না পাওয়া, রফতানির অর্থ হাতে না পাওয়া প্রভৃতি কারণে যথাসময়ে বেতন-বোনাস দিতে পারেন না মালিকরা। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান কঠিন নয়। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে যেসব গার্মেন্ট কারখানা মুনাফা অর্জন সত্ত্বেও শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে চায় না, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে কোনো প্রতিষ্ঠান বেতন-ভাতা পরিশোধ না করলে সরকার ও মালিকদের সংগঠনের হস্তক্ষেপ করা সহজ হবে না। ফলে সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষ এবং উৎপাদন বিঘিœত হওয়ার দায় মালিক ও সরকারকে নিতে হবে। শ্রমিকদের প্রতারিত বা বঞ্চিত করার কোনো অভিপ্রায় না থাকলে তাদের পাওনা আগে পরিশোধ করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এখনই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। শুধু বেতন-বোনাস পরিশোধের শেষ তারিখ নির্ধারণ নয়, সেটা যাতে মালিকরা মানতে বাধ্য হন, তাও নিশ্চিত করতে হবে।
উৎসবের সময় শুধু নয়, কিছু কারখানা সবসময়ই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে গড়িমসি করে। এটি প্রতিরোধে বছরব্যাপী তদারকির ব্যবস্থা থাকা চাই। যেসব কারখানা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বোনাস দেয়নি, সেগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলো দায় এড়াতে পারে না। সংগঠনের অধীন যেসব কারখানা নির্ধারিত সময়ে অযৌক্তিক কারণে বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে শুধু সময় নির্ধারণ করে মালিকদের শ্রমিক ঠকানোর প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না। মালিকরা ইচ্ছামতো উৎসব ভাতা নির্ধারণ করছেন। শ্রম আইনে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় এটি হচ্ছে; যা শ্রমিক অসন্তোষের অন্যতম কারণ। নির্ধারিত সময়ে বেতন-বোনাস প্রদান না করায় শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে খবর মিলছে। যেকোনো সময়ে বড় ধরনের বিপত্তি ঘটে যেতে পারে। সরকারের উচিত বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া।
বেতন-বোনাস প্রদানকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ রোধে কর্তৃপক্ষকে আরো সতর্ক হতে হবে। শ্রমিক বিক্ষোভ দমনের চিন্তা না করে যে কারণে এ অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে, তার সমাধানে সচেষ্ট হওয়া চাই। নির্ধারিত সময়ে বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হলেই তো সমস্যা মিটে যায়। শিল্প-কারখানার নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ হয়েছে কয়েক বছর হয়ে গেল। এ সময়ে মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের যে বেতন হওয়ার কথা, তা থেকেও বঞ্চিত শ্রমিকরা। উৎসবের সময়ও যদি তারা সামান্য বেতন না পান, তাহলে পরিবার নিয়ে কীভাবে উৎসব উদযাপন করবেন! প্রতি বছরই এমন প্রবণতা লক্ষ করা গেলেও শ্রম মন্ত্রণালয় এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নিতে পারেনি, যা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই থেকে যাচ্ছে।
সরকার যে শুধু ঘোষণা দিয়েই তাদের দায়িত্ব পালন করবে এমন নয়। প্রতি বছরই শ্রম মন্ত্রণালয় মালিকপক্ষের কিছু নেতাকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে ঘোষণা দেয়, ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়া হবে। তার পরও প্রতি বছরই এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। সরকার কখনই তদারক করে না। সরকার যদি যথাযথ তদারক না করে, তবে এ ঘোষণা কোনো তাৎপর্য বহন করে না। এখনো সময় আছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে তথ্য দিয়েছে, সে অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আর তা না করলে শ্রমিক অসন্তোষের মতো ঘটনা ঘটবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর