কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধিঃঈদে ছেলেদের পোশাকের মধ্যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু পাঞ্জাবি। খুচরা বাজারে পাঞ্জাবি বিক্রির পাশাপাশি কেরাণীগঞ্জের পাঞ্জাবির পাইকারি বাজারে এখনো পাইকারদের বেশ ভিড় দেখা গেছে।
এখানকার দোকান মালিকরা জানান শবে বরাতের পর থেকেই পাইকারি বাজারে বেশ বিক্রি হচ্ছে। তাদের মতে সারাদেশের পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে কেরাণীগঞ্জের বেশ কয়েকটি পাঞ্জাবির পাইকারি বাজার।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দেশের মোট পাঞ্জাবির চাহিদার ৬০-৭০ শতাংশই সরবরাহ করে থাকে কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেট থেকে।
পাঞ্জাবি বিক্রেতাদের মতে রাজধানীসহ সারা দেশের অভিজাত বিপনিবিতান-ফুটপাতের মার্কেট দখল করে নিয়েছে কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর ও কালীগঞ্জের বাহারি পাঞ্জাবি। দামে কম ও কাপড়ের গুণগতমান থাকায় ক্রেতারা লুফে নিচ্ছেন এ অঞ্চলের তৈরি পাঞ্জাবি। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে নির্ঘুমরাত কাটাচ্ছেন দর্জিরা। যদিও বছর জুড়েই চলে পাঞ্জাবি তৈরির কাজ তবে ঈদ এলেই কারিগরদের হতে হয় গলদঘর্ম। কম করে হলেও এবারের ঈদ বাজারে ৭ কোটি পাঞ্জাবি সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিকরা।
কালিগঞ্জ, আগানগর ও শুভাঢ্যার বিভিন্ন কারখানায় ঘুরে দেখা গেছে পাঞ্জাবি তৈরির ধুম। রাত জেগে চলছে চোষা, রাজশাহী সিল্ক, বুটিক, বাংলালিংক, তসর কাপড়সহ বাহারী ঢংয়ের ফ্যাশনেবল পাঞ্জাবি তৈরির কাজ। ১০০-৩০০০ টাকা দামের ফ্যাশনেবল পাঞ্জাবি মিলছে কালিগঞ্জের মার্কের্টে। একদশক আগেও দেশের পাঞ্জাবির বাজার ভারত-পাকিস্তানের দখল ছিল। এখন আর সেই অবস্থা নেই। ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এখন দেশেই উন্নতমানের পাঞ্জাবি তৈরি হয়।দাম ক্রেতাদের নাগালে।
শুভরাজ গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম খলিল জানালেন দিনের পর দিন বাড়ছে এ এলাকার তৈরি পাঞ্জাবির চাহিদা। সারাদেশে এখানকার পাঞ্জাবির ব্যপক চাহিদা থাকা সত্বেও আমরা পুরোপুরি সেই চাহিদা মেটাতে পারছি না। চাহিদার অর্ধেক মেটানো সম্ভব হয় এখান থেকে। যার কারণে এখনো পাইকারদের পদচারণায় মুখরিত রয়েছে তৈরি পোশাকের বাজার। ১০০-৩০০০ টাকা দামের যে ফ্যাশনেবল পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে তাই পাইকাররা খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে দিগুণ দামে।
পূর্ব আগানগর জেলা পরিষদ মার্কেটের মুসলিম কালেকশনের মালিক ও প্রধান ডিজাইনার মো. মুসলিম ঢালী জানান, সেলাইয়ের বিভিন্ন নকশার মাধ্যমে মুসলিম কালেকশনের পাঞ্জাবিতে রয়েছে বিশেষত্ব ও নতুনত্ব। লাল,কফি,বেগুনি,কমলা,জলপাই ও সবুজের পাশাপাশি হালকা আকাশি,সাদা,অফ হোয়াইট,পিংক,ধুসর রং ব্যবহার করা হয়েছে। মুসলিম ঢালী বলেন এবছর পাঞ্জাবিতে উজ্জল রঙের প্রাধান্য রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ইষ্টার্ণ ও ওয়েষ্টার্ণ কাট ডিজাইনের সংমিশ্রণ।
আলম সুপার মার্কেটের গ্রুভী পাঞ্জাবির মালিক মো. জহির উদ্দিন জানান, এ এলাকায় তাদের তিনটি শো-রুম রয়েছে। ৬৫০-২০০০টাকা দামের পাঞ্জাবি রয়েছে তাদের শো-রুমে। যা রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
মো. জহির উদ্দিন বলেন রং আর ডিজাইনের দিকে খেয়াল রেখে আমরা একটু ভিন্ন স্টাইলের পাঞ্জাবী বাজারজাত করে থাকি।
একই ধরণের মন্তব্য ওই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী জিলাস গার্মেন্টেসের মালিক হাজী মো. নাজিম উদ্দিনের। তিনি বলেন, আমরা বর্তমান সময়ের সাথে রুচিশীলতাকে প্রাধান্য দিয়ে পোশাক তৈরি করে থাকি। এ মৌসুমে তাদের বিক্রির টার্গেট প্রায় ২ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, ছোটদের জন্য ১০০-১৫০ টাকা দরের পাঞ্জাবি রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন অভিজাত বিপনিবিতানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়। বড়দের জন্য তৈরি পোশাক এখানকার বাজারে ৫০০-১০০০ টাকায় পাওয়া গেলেও খুচরা বাজারে সেগুলোর দাম দ্বিগুণ।
কেরানীগঞ্জ গামেন্টস মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুল আজিজ জানান, এবছর ফুলহাতা কম্বাইন্ড, আদি স্টাইপ,সুতি পাট্টা, জামদানি, বার্মিজ, গ্রামীণ চেক, সুতি কম্পিউটার, দেশি হাতের কাজ, স্ক্রাব এমব্রডারি পাঞ্জাবি তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এগুলোর চাহিদাও অনেক। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নিরীহ ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘ্নে কেনা-কাটা করতে পারেন সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।