শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন

গ্রামীণ সড়কে দুরন্ত গতির ডাম্পার ট্রাক, ঠেকাবে কে

ক্রাইম ফোকাস ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১০ জুন, ২০১৮
  • ১৪৩ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ শ্যামনগর উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইট ভাটায় ইটের কাঁচামাল মাটি আনা নেয়াসহ ইট পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয় ডাম্পার ট্রাক। অথচ ইট ভাটা স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে কাঁচামালসহ ইট পরিবহনে গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার যাবে না।
কিন্তু সরকারি সে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিটি ইট ভাটার অসংখ্যা ডাম্পার ট্রাক প্রতিনিয়ত চলাচল করছে গ্রামীণ সড়ক ধরে। যার ফলে দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রামীন সড়কসহ সংযোগ সড়কের কালভার্ট ও ব্রিজ। মাঝেমধ্যে প্রানঘাতি দুর্ঘটনারও শিকার হচ্ছে অনেকে।
কোন কোন স্থানে রাতে ডাম্পার ট্রাক গ্রামীণ সড়কে যাতাযাত করলেও অধিকাংশ স্থানে প্রকাশ্যে একের পর এক ডাম্পার ট্রাক চলাচল করছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসন সবই কার্যত নিশ্চুপ।
শ্যামনগর উপজেলার ইসমাইলপুর, সোনারমোড়, গোমানতলী, চালতেঘাটা, শ্যামনগরের সীমান্তবর্তী কালিগঞ্জের খড়িতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পরির্দশনে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে সোনারমোড়-গোমানতলী সংযোগ সড়ক ধরে দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে ১২টি ডাম্পার ট্রাক। ইট ভাটার কাঁচামাল মাটি নিয়ে আসছে এসব বাহনগুলো অনতিদুরের গোমানতলী এলাকা থেকে।
সংকেত দিয়ে সম্মুখভাগে থাকা একটি ডাম্পার ট্রাক থামিয়ে চালক ও তার সহযোগীর সাথে কথা বলে জানা যায় ইসমাইলপুরের এবি ব্রিকস এর জন্য তারা মাটি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ সড়কে ডাম্পার ট্রাকের চলাচল অনুমোদিত না হওয়া সত্ত্বেও তারা ঐ কাজ কেন করছে – এমন প্রশ্নে চালকের সাবলীল জবাব, “মালিকের নির্দেশে কাজ করি”। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আঠার বিশ বছর বয়সী ঐ চালক আরও জানায়, মালিকের নির্দেশ রয়েছে রাস্তাঘাটে কোন সমস্যা হলে ম্যানেজার কিংবা তাকে অবহিত করার। যে কারনে গ্রামের রাস্তায় চলাচলের সময় কোথাও কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে মালিক ও ম্যানেজারকে জানাতেই তারা তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌছে বিষয়টি মিটমাট করে ফেলেন।
চালতেঘাটা-জাহাজঘাটা সংযোগ সড়কের সামনে পৌছাতেই চোখে পড়ে তীব্র গতিতে একাধারে প্রায় ১০ টি ডাম্পার ট্রাক পার্শ্ববর্তী চালতেঘাটা বিল থেকে মাটি টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রাচীন ঐ সংযোগ সড়কের সামনের অংশে কয়েক মুহুর্ত দাড়িয়ে দেখা যায় মাটি নিয়ে মুল সড়কে ওঠার পর থেকে গন্তব্যে না পৌছনো পর্যন্ত প্রায় অভিন্ন গতিতে ছুটে যাচ্ছে প্রতিটি ডাম্পার ট্রাক। গায়ে বড় বড় অক্ষরে সুন্দরবন ব্রিকস লেখা বাহনগুলো একই সড়কের মধ্যভাগে অবিস্থত চালতেঘাটা ব্রিজের উপর ওঠা-নামার সময়ও ন্যুনতম গতির হেরফের করছে না।
পাশের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসা মর্জিনা বেগম ও তার ছেলে আব্দুল্লাহ বলেন, দেখেন দেখেন, কত দ্রুত গতিতে ডাম্পারগুলো যাচ্ছে। এখানে রাস্তার পাশে মানুষের বসতিসহ অনতিদুরে একটি ব্রিজ রয়েছে। কিন্তু কোন সময়ের জন্য তাদের ডাম্পারের গতি কমে না। ডাম্পার ট্রাকের বিশালাকৃতির চাকার অবিরাম ধাক্কা ও ঝাঁকুনিতে ব্রিজের দুই পাশে ওঠানামার স্থানে প্রায় এক ফুট করে ডেবে যাওয়ার দৃশ্য আঙুল দিয়ে দেখান ঐ রাস্তা ধরে এগিয়ে চলা কয়েকজন পথচারী।
স্থানীয়দের পাশাপাশি পথচারীরা অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের এসব রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় ধীর গতিতে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা ন্যুনতম গ্রাহ্য করে না।
মর্জিনা বেগম আরও অভিযোগ করে বলেন, অনবরত ডাম্পারের চলাচলে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ভাঙন কবলিত অংশে কিছু ইটের টুকরা এনে দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ডাম্পারের চালক ও ম্যানেজার তাদেরকে অত্যন্ত কড়া ভাষায় শাষিয়ে যান, দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘ইট দিতি বলতেই ওরা বলে, সরকারের রাস্তা, সরকারই ঠিক করবে, তোমাগো এত মাতব্বরি করতে হবে না”।
এমন অবস্থা কেবলমাত্র ভুরুলিয়ার চালতেঘাটা কিংবা সোনারমোড় বা গোমানতলী এলাকায় না। বরং গোটা উপজেলাজুড়ে সর্বত্র ডাম্পার ট্রাকের যথেচ্ছা চলাচলে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামীণ সড়ক।
রাস্তা আর ব্রিজ কালভার্টের পাশাপাশি ডাম্পার ট্রাকের অনবরত চলাচলে প্রতিনিয়ত ছোট বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে। উল্লেখ্য গত ৭ জুন শ্যামনগর উপজেলার সোনারমোড় এলাকায় তৃতীয় ¤্রনেীর ছাত্রী আয়েশা মনি দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা একটি ট্রাক ডাম্পারের দুর্ঘটনার শিকারে পরিনত হয়। চাকা খূলে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমিত হলেও পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় দুরন্ত গতিতে চলাচলকারী ঐ বাহনের চাকার রিং আগে থেকেই কিছুটা ভাঙা অবস্থায় ছিল। যে কারনে এবড়ো থেবড়ো হয়ে পড়া মুল সড়কে পৌছেও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলার কারনে প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে পড়ে রিং-এর সম্পুর্ন অংশ ভেঙে চাকা খুলে গিয়ে তা নানীর হাত ধরে এগুতে থাকা আয়েশা মনিকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়।
সমাজকর্মী প্রভাষক দেবাশীষ মিস্ত্রী বলেন, গ্রামীন সড়কে চলাচলের অনুমতি না থাকার পরও কিভাবে তা এসব রাস্তা ব্যবহার করছে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। নিয়ম নিিতর তোয়াক্কা না করে চলাচলকারী এসব বাহনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার দাবি জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর