দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের পার্বতীপুরে কলেজছাত্র সুমন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মেয়েকে ভালোবাসার অপরাধে মেয়ের পিতা সঙ্গীদের নিয়ে ঘুমন্ত সুমনকে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং লাশ বস্তায় ভরে ইট বেধে দিয়ে বিলের কচুরিপানায় ফেলে দেয়। এভাবে থানা পুলিশ ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ধৃত জীতেন্দ্র নাথ রায় (৫০)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের ইন্সপেক্টর (ইনচার্জ, বড়পুকুরিয়া তদন্ত কেন্দ্র) মো. সিরাজুল হক (পিপিএম) জানান, জীতেন্দ্র নাথের মেয়ে পপি রানীর সাথে সুমনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে সে তাদের বাড়িতেও যাওয়া আসা করতো নিয়মিত। এ ঘটনায় সুমনকে মেয়ের বাবাসহ পরিবারের সবাই অনেক বাধা নিষেধ করেছে কিন্তু সে কারো কথা শোনেনি। এক পর্যায়ে গত ডিসেম্বরে সুমন পপিকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
পরে সৈয়দপুর বাসটার্মিনালে মটর শ্রমিকেরা এদু’জনকে আটক করে অভিভাবকদের খবর দেয় ও অভিভাবকদের হাতে তাদের তুলে দেয়। হত্যাকাণ্ডের ২-৩ দিন আগে সুমন নিজ বাড়িতে রঙের কাজের কথা বলে ফের জীতেন্দ্র নাথের বাড়িতে যায় এবং সেখানে অবস্থান করে। হত্যাকাণ্ডের রাতে সুমন জীতেন্দ্র নাথের বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়লে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক জীতেন্দ্র তার অপর তিন সঙ্গী মিলে ঘুমন্ত সুমনকে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং লাশটি বস্তাবন্দি করে স্থানীয় দেবীডুবা বিলে ফেলে দেয়। দীর্ঘ এক মাস পর লাশটি ভেসে উঠলে পুলিশ উদ্ধার করে এবং সুমনের জেঠ্যা খতিবর রহমান বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ তদন্তের পর পার্বতীপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হাবিবুল হক প্রধানের নেতৃত্বে তদন্ত কর্মকর্তা সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গত ২৬ মে রাতে জীতেন্দ্র নাথকে তার বাড়ী উপজেলার বেলাইচন্ডী ইউনিয়নের দেউল বানিয়াপাড়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। ২৭ মে তাকে আদালতে হাজির করা হলে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পুলিশ জানায়, অন্য আসামী গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গত ২০ ফেব্র“য়ারী বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হওয়া শাহাদত জামান ওরফে সুমন (২২) এর বস্তাবন্দি গলিত লাশ গত ২২ মার্চ সকালে উপজেলার বেলাইচন্ডী ইউনিয়নের দেবীডুবা বিলের কচুুরিপানার ভেতরে ভেসে উঠলে সেখান থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। থানা সূত্র জানায়, যে বস্তার ভেতর লাশ ছিল সে বস্তার মধ্যে হত্যাকারীরা ইট বেধে দিয়ে রেখেছিল, যাতে লাশ ভেসে উঠতে না পারে। লাশের গলা থেকে মাথা পর্যন্ত কোন মাংস, মাথার চুল ও ডান হাত ছিল না। শুধু শরীর বস্তাবন্দি থাকায় কিছুটা গলিত মাংস লেগে ছিল। তার পরনের জিন্সের প্যান্টের পেছনের ডান পকেটের মানিব্যাগে তার মা, জেঠ্যা ও এক মহিলার ছবি পাওয়া যায়। পরে তার আত্মীয়রা এসে ছবি ও পরনের কাপড় দেখে লাশ শনাক্ত করে। সে উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের বড় চন্ডিপুর চৈতাপাড়া গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের পুত্র। এবার তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সুমনের পিতা ২০১৬ সালে রমজান মাসে অটোবাইকের ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। পরিবারে তার মা, এক ভাই ও এক বোন আছে। সে পার্বতীপুর আদর্শ কলেজে পড়তো। এছাড়াও অভাবের সংসারে সাহায্য করার জন্য মাঝে মাঝে ঢাকায় গিয়ে রংয়ের কাজ করতো। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করায় সুমনের পরিবার পুলিশকে ধন্যবাদ জানায়। সেই সাথে দ্রুত বিচার সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।