নিয়াজ মাহমুদ :১. কোচ তিতে আসার পর ব্রাজিল যেন পুরোপুরি ভিন্ন এক দল। গত কয়েক বছরের ব্যর্থতার চাদরকে ভুলিয়ে দিয়েই যেন বর্তমান এই শক্তিশালী দল হেক্সা মিশনে নামলো। হেক্সা অর্থাৎ ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে।
২। এ পর্যন্ত সবগুলো বিশ্বকাপ খেলতে পারা একমাত্র দল ব্রাজিল। সেলেসাওরা পুরো ফুটবল বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেই প্রথম থেকেই , এখন পর্যন্ত মোট বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে পাঁচবার। এই দলটি! ১৯৫৮, ৬২, ৭০ এই তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে ট্রফিটাকে আজীবনের মতোই নিজের সম্পত্তি বানিয়ে নেয় দেশটি।
এরপর আবার ১৯৯৪, ২০০২ আসরেও শিরোপা ঘরে তোলে দলটি। ১৯৫০ আর ৯৮ তে এসে দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে এই দলটি তীরে এসে তরী ডুবিয়ে রানারস আপ হয়ে ঘরে ফিরেছিল! তার মানে বোঝাই যায় ফুটবল ইতিহাসে সবথেকে সফল দল এখন পর্যন্ত ব্রাজিল। এবং এই সফল দলেরই গত বিশ্বকাপে নিজেদের মাঠেই জার্মানির সাথে ৭-১ ব্যবধান হেরে গিয়েছিল। আর সেই কলঙ্ক ঘুচানোর দায় বর্তমান এ দলটির। চাঁদের ও যেমন কলঙ্ক থাকে…
৩। অনেক সমালোচকই বলেছিলেন যে , রবারতো কার্লোস , রোনালদো, রোনালদিনহো, কাকা, পেলে, কাফু, দিদা, রিভালদোর মতো প্লেয়াররা বয়সের ভারে দল থেকে হারিয়ে গেছেন অনেক আগেই। আর ওই ক্যালিবারের তুলনা করলে ব্রাজিল দলে এখন বর্তমানে একজনই পাওয়া যাবে। আর তিনি হলেন নেইমার। আর একক নৈপুন্যে বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব নয়। আর নেইমারের শৃঙ্খলাজ্ঞান একটু কমই, তাই তার অনুপস্থিতিও এই দলকে ভোগাতে পারে দারুণভাবে। কিন্তু সত্য বলতে এগুলো নিছকই সমালোচনার জন্যই। কারন পাঁচবার বিশ্বকাপজয়ী দলটির স্কোয়াডের গভীরতা চিন্তা করলে আপনি ধরেই নিতে পারেন বিশ্বকাপ ব্রাজিলের। র
ক্ষণভাগ থেকে শুরু করে আক্রমণভাগ প্রতিটি বিভাগেই দক্ষ খেলোয়াড় ব্রাজিলের ঝুলিতে কম নেই। এবং তাদের প্রত্যেকেই বিশ্বমানের খেলোয়াড়। দানিলো, মারসেলো, ফিলিপ লুইস, থিয়াগো, মিরিন্ডা, যারাই খেলুক না কেন, এরা যে একেকজন একেকটা দুর্ভেদ্য প্রাচীর তা তারা আজীবন গোলবারের সামনে থেকে নাইট ওয়াচার হয়ে অতন্দ্র প্রহরীর মতোই ব্রাজিলিয়ান সাইডের গোলবার কে রক্ষা করেই প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক। বেনজোর মতো দক্ষ ফুটবল ক্রীড়াবিদ কমই আছে। অনেকটা তরুণ নির্ভর দল হওয়ায় অভিজ্ঞতার অভাব কিছুটা বোঝা গেলেও আসল মাঠে এর প্রভাব যে একদমই পড়বেনা তা হলফ করেই বলে দেয়া যায়। এবং এই বিশ্বকাপে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে ও অনেক সমালোচক ই বলেছেন যে, ব্রাজিল এবার সবথেকে ভারসাম্যপূর্ণ দল। সুতরাং ভারসাম্য বজায় রেখেই যদি খেলে যেতে পারে তারা, তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকাই যায় যে, কাপটা ব্রাজিলের হাতেই যাচ্ছে।
আক্রমণ ভাগ বিশ্লেষণ করলে দেখবেন যে, নেইমার –কৌতিনহো _-জেসুস ত্রয়ীর দিয়ে গড়া এরকম শক্তিশালী আক্রমণভাগ এখন গুটি কয়েক দল ছাড়া অন্য কোন দলে নেই। শুধু বাছাইপর্বেই এই ত্রয়ীর গোল আছে সতেরোটি। যেকোনো দলের জন্যই এরা যে কেউ হয়ে উঠতে পারেন ভয়ংকর। আর বার্সেলোনা দলের গুরুত্বপূর্ণ আরেক সদস্য অন্য যেকোনো দলের মধ্যমাঠের ত্রাস পাওলিনহো ও আবার মাঝে মাঝে হুটহাট গোল করে বসেন। সুতরাং বিপক্ষ দলের জন্য চারদিক থেকেই বিপদ সামলাতে হবে। আর ব্রাজিল দলের ত্রুপের তাস কে হতে পারেন তা আশা করি বলার অপেক্ষা রাখেনা! হাজার হাজার ব্রাজিলীয়ান ড্রিমসের একমাত্র নায়ক।
নেইমার! যিনি একাই একটা ম্যাচ ঘুরিয়ে নিতে পারেন। তবে তার সমস্যা একটাই ইনজুরি। কিন্তু ইঞ্জুরির আগে ৮৩ ম্যাচে গোল ৫৩ টি। তিনি যে যেকোনো দলের জন্যই ভয়ংকর তা নির্দ্বিধায় ই বলে দেয়া যায়। আর তিতে আসার পর তো ব্রাজিল পুরো নতুনই। গ্যালারিতেও সাম্বা নাচ চলে ঠিক আগের মতোই! আর নেইমারকে ছাড়াই প্রস্তুতি ম্যাচে জার্মানিকে তাদেরই মাঠে পুরো তুলোধুনো করেই ছাড়লো বর্তমান এই দল। আর তিতের অধীনে এই দলটি খেলেছে ১৯ ম্যাচ, যার মধ্যে জয় এসেছে মোট ১৫ টি তে। ড্র ৩ টি আর হার আছে মোট ১ টি তে। গোল ৪২ টি। খেয়েছে মাত্র ৫ টি।আর জয়ের হার প্রায় আশি শতাংশ। সুতরাং ব্রাজিল যে এই শিরোপার অন্যতম দাবিদার তা স্বীকার করতে কারোরই অত্যুক্তি হবার কথা না।
ক্রোয়েশিয়ার মতো শক্ত দলের গোলবারেও ইনজুরি থেকে ফিরেই গোল ঢুকিয়ে দেয়া চারটি খানি কথা না! এতক্ষণ পর্যন্ত ফারমীনহো এর কথাই বলা হয়নি। ফারমিনোর কথা আসলে বলার কিছু নেই। সে ও যে নেইমারের মতো ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়া খেলোয়াড়, তা কমবেশি সব দলই বোঝে এবং হয়তো সেই অনু্যায়ীই পরিকল্পনা সাজানো হবে। দানিলো, মারসেলো, ফিলিপ লুইস, থিয়াগো, মিরিন্ডা, যারাই খেলুক না কেন, এরা যে একেকজন একেকটা দুর্ভেদ্য প্রাচীর তা তারা আজীবন গোলবারের সামনে থেকে নাইট ওয়াচার হয়ে অতন্দ্র প্রহরীর মতোই ব্রাজিলিয়ান সাইডের গোলবার কে রক্ষা করেই প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক। আর ডগ্লাস কস্তা, ক্যাসেমিরো , ফ্রেড, আগস্টো এদেরই বা কোন হিসেবে ফেলে রাখবেন আপনি।
অনেকটা তরুণ নির্ভর দল হওয়ায় অভিজ্ঞতার অভাব কিছুটা বোঝা গেলেও আসল মাঠে এর প্রভাব যে একদমই পড়বেনা তা হলফ করেই বলে দেয়া যায়। এবং এই বিশ্বকাপে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে ও অনেক সমালোচক ই বলেছেন যে, ব্রাজিল এবার সবথেকে ভারসাম্যপূর্ণ দল। সুতরাং ভারসাম্য বজায় রেখেই যদি খেলে যেতে পারে তারা, তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকাই যায় যে, এবারের আসরের কাপটা ব্রাজিলের হাতেই যাচ্ছে।