নিজস্ব প্রতিনিধিঃপ্রধান শিক্ষিককে ম্যানেজ করে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধলক্ষাধিক টাকার গাছ বিক্রি করেছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জসীম সরদার। এ ঘটনায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটিসহ এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাটা গাছ জব্দ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার পশ্চিম সুজনকাঠী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
ওই স্কুলের ভূমি দাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য পরিমল রায় জানান, তার বাবা স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় (২০ বছর আগে) ২৮ শতক ও স্থানীয় বাসিন্দা চিত্ত রঞ্জন মল্লিক আট শতক সম্পত্তি দান করেছেন। তার কমিটির সময় স্কুল চত্বরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করা হয়। তিনি আরও জানান, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জসীম সরদার প্রধানশিক্ষক স্মৃতিকনা দাসকে ম্যানেজ করে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে স্কুল কমিটির কোন সভা না করে বিনা কারণে স্কুল চত্বরের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের দুইটি মেহগনি ও নয়টি চাম্বল গাছ তার ফুফাতো ভাই ফরহাদ মিয়ার কাছে বিক্রি করেন।
গাছের ক্রেতা ফরহাদ মিয়া জানান, তিনি স্কুল ম্যানেজিং কমিপির সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান জসীম সরদারের কাছ থেকে ছয়টি গাছ ১৫ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন। বাকী পাঁচটি গাছ ধরার মধ্যে নয়। বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক স্মৃতিকনা দাস বলেন, গাছ বিক্রির ব্যাপারে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কোন আলোচনা বা কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। বৃহস্পতিবার সকালে গাছ কাটা শুরু করার পর তিনি বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করেছেন।
শিক্ষা অফিসার সিরাজুল হক তালুকদার জানান, স্কুলের গাছ বিক্রির খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সুনীল দেবনাথ ও আবুল কালাম আজাদকে তিনি ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলেন। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদ্বয় এসে তাকে জানিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধানশিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে লিখিতভাবে ওই গাছ বিক্রি করা হয়েছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান জসীম সরদার জানান, গাছগুলি স্কুলের নয়, ব্যাক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তির গাছ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাঠ জরিপে বিদ্যালয়ের নামে ১৫০২ খতিয়ানে তিনটি দাগে ২৬.৬৬ শতক সম্পত্তি রেকর্ড হয়েছে। সরকারী নিয়মানুযায়ী পূর্বে ৫৫ শতক, তার পর ৫২ শতক ও বর্তমানে ৩৩ শতক জমি থাকার বাধ্য বাধকতা থাকলেও বর্তমানে ওই স্কুলের সম্পত্তি রয়েছে মাত্র ২৬.৬৬ শতক। যা বিদ্যালয় স্থাপনে পরিপত্র পরিপন্থী।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রাফ আহম্মেদ রাসেল জানান, অধিকাংশ গাছ কাটা হয়ে গেছে। বাকী দাঁড়ানো গাছগুলো না কাটতে ক্রেতা ফরহাদ মিয়াকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কাটা গাছগুলো জব্দ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের নামে ৩৩শতক জায়গা রেকর্ড না থাকলে আইনী জটিলতা দেখা দেবে। তাই সরকারী আমিন দিয়ে স্কুলের সম্পত্তি মেপে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।