সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ এক সঙ্গে পাঁচজন। হাতে অনেক গুলো জামা-কাপড় ভর্তি থলে। রুবাইয়া সুলতানা বললেন ‘দুই জন আমার ও দুইজন ভাসুরের মাইয়ে। ঈদে কেনাকাটা কত্তে আইলাম। সবার জন্যি জামা কিনলাম। দাম একটু বেশি হলেও দেশি জিনিস কিনছি।’ সাতক্ষীরা শহরের বসুন্ধারা টাওয়ার ‘নিপুন-২ ’ কাপড়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এসব কথা হয় তার সঙ্গে।
একই ভবনের ‘নুসরাত ফ্যাসন হাউজ’ কথা হলে কলেজ ছাত্রী কিয়া সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলনেন এ দোকান থেকে তার জন্য টুপিস ও তার মা এর জন্য কিনেছেন সুতি শাড়ি ‘ধুপিয়ান।’ পছন্দসই জামা-কাপড় দেখেশুনে কিনতে পরেছেন। দামও সামর্থের ভিতর।
সরেজমিনে বৃহষ্পতিবার ও শুক্রবার সাতক্ষীরা শহরের নিউ মার্কেট, চায়না-বাংলা শপিং সেন্টার, সাতক্ষীরা শপিং সেন্টার, মেহেরুন প্লাজা, মেহেদি সুপার মার্কেট, আল বারাকা মার্কেট, লন্ডন প্লাজা,আমীনিয়া মার্কেট ,থানা সড়কের দোকান ও সুলতানপুর বড় বাজারের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে ঈদের বাজার জমে উঠেছে। সারাদিন ভিড় লেগেই আছে। কেনাকাটা চলছে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত। কয়েকটি মার্কেট ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা যাচ্ছে। তিঁল ধরণের ঠাঁই নেই। ক্রেতাদের দৃষ্টিতে আসতে কয়েকটি মার্কেটের সামনে করা হয়েছে ঝলমলে আলোকসজ্জা।
এসব মার্কেটের কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টুপিস, ত্রিপিস, সালোয়ার-কামিজ পাশাপাশি টাইস সিল্ক, দক্ষিণবরণ, কাদরান,কাটপা গাউন, পদ্মবতি তরুণীদের এসব পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশি পছন্দ করছেন ক্রেতারা কাটপা গাউন ও খাড়কি। এসব পোশাকের মূল্য ১৫০০-৬০০০ হাজারের মধ্যে। শাড়ি মধ্যে কাঞ্চিকাতান, রুপশিকাতন,সুতি ধুপিয়ান বাংলাদেশী জামদানি প্রভৃতি ড্রেস বিক্রি হচ্ছে বেশি। শাড়ির মূল্য ২৫০০-৮০০০ হাজার।
বসুন্ধরা টাওয়ারের নিপুন-২ এর সত্বাধাকারী মো: সালাউদ্দিন জানান, মেয়েদের নানা ধরণের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। ৩-৪দিন হলো বিক্রি বেড়েছে। আশা করছেন সামনের দিনগুলোতে আশানূরূপ বিক্রি হবে।
একই মার্কেটের নুসরাত ফ্যাসন হাউজের সত্বাধাকারী শেখ আব্দুল আহাদ জানান, তাদের বেচাকেনা অনেক বেড়েছে। সব ধরণের জামাকাপড় থাকায় খরিদ্দাররা তাদের পছন্দ মতো পশোক কিনছেন স্বচ্ছন্দভাবে।
নবরূপা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মো: জহিরুল ইসলাম জানান,পাঞ্জি,শার্ট-প্যান্ট, বিক্রি করেন। ঈদের বাজার লেগেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,পাঞ্জাবির মধ্যে সুতি পাঞ্জাবি, জর্জেট পাঞ্জাবি,সিল্ক পাঞ্জাবি, জামাদানি পাঞ্জাবি ও মটকা পাঞ্জাবি। এসব পাঞ্জাবির দাম ৩০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। শার্ট ৭০০ থেকে দুই হাজার প্রায় সম পরিমাণ মূল্য প্যান্টেরও ।
আমীনিয়া মার্কেটের জামিলের ক্লথ স্টোরের মালিক জামিল হোসেন জানান, তিনি প্যান্ট-শার্টের কাপড় বিক্রি করেন। ঈদের বাজার তেমন ভালো না উল্লেখ করে তিনি বলেন তৈরি প্যান্ট-শার্ট, মেয়েদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। কাপড় তেমন বিক্রি হচ্ছে না। সাতক্ষীরা শহরের সবচেয়ে বড় টেলার্স মালিক বঙ্কিম বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অর্ডার সামন্য বেড়েছে। আশানূরূপ নয়। এছাড়া সাতক্ষীরা শহরের থানা রোডে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।
আসাদুল চেয়ারম্যান মার্কেটের সামনে ন্যাশনাল ট্রেডার্সের মালিক অজিত অধিকারী জানান, প্রথম দিকে কেনা বেচা কম হলেও ঈদ যতই সামনে আসছে ততই বিক্রি বাড়ছে। মহিলদের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ ভালই বিক্রি হচ্ছে। আবহাওয়া ভাল গেলে আগামি কয়েকদিন বেচাকেনা ভালই হবে।
এদিকে ঈদের বাজার জমে উঠায় সাতক্ষীরা শহরে যানজট বেড়েছে কয়েকগুণ। এক কিলোমিটার যেতে ঘন্টা পেরুয়ে যাচ্ছে। দোকানী মনে করছেন জানযটের কারণে তাদের বেচাকেনা যেমন অসুবিধা হচ্ছে, তেমনি ক্রেতাদের সমস্যা বেড়েছে কয়েকগুণ।
সরেজমিনে শুক্রবার পাকাপোল এলাকায় বিকেল পাঁচটার দিকে দেখা যায়, শহরের জনতা ব্যাংক সামনে থেকে প্রেসক্লাব হয়ে পিএন হাইস্কুল মোড় পর্যন্ত ঘন্টার উপর যানজট। হেটেও পারাপার হওয়া যাচ্ছে না। পাকাপোল এলাকায় দুইজন ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করছেন চলাচল স্বাভাবিক করার। কিন্ত তাদের চেষ্টা নিষ্ফল হচ্ছে। একই অবস্থা নিউ মার্কেট সামনের সড়কেও । দুপুর দেড়টার সময় আধাঘন্টা অপেক্ষা করে পাকাপোলের দিকে না যেতে পেরে এ প্রতিবেদককে আবার খুলনা রোডের দিকে ফিরে যেতে হয়। পচন্ড গরমে মানুষজন হাঁসফাঁস করছে।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাড.আবুল কালাম জানান, শহরে যেভাবে যানজট হচ্ছে তাতে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সকাল সাড়ে নয়টার পর থেকে দিনভর যানজট লেগেই থাকে। এক কিলোমিটার অনেক সময় একঘন্টায়ও যাওয়া যাচ্ছে না।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো: সাজ্জাদুর রহমান বলেন, শহরের সড়ক অপ্রস্থ ও মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে শহরের অধিক সংখ্যক মানুষ শহরে আসছে। ফলে যানজট বেড়েছে। এ জন্য শহরের ট্রাফিক সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাতে কোনো ধরণের আইন শৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে এ জন্য চার স্তরে নিরাপত্তার ব্যবস্থার করা হয়েছে।