নিউজ ডেস্কঃআমাদের দেশে ভোজ্য তেল হিসেবে সয়াবিনের কদর অনেক। সয়াবিন তেল রান্না ঘরে পৌঁছায়নি এমন ঘরের সংখ্যা আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু এ তেল কিভাবে তৈরি হয়- এটি হয়তো অনেকেরই অজানা। আজকে আমরা জানবো কিভাবে সয়াবিন তেল তৈরি হয়। কেন এত জনপ্রিয় এই তেল? কিভাবে এই তেল সংগ্রহ করা হয়?
প্রাচীন কাল থেকে সয়াবিন তেল ধীরে ধীরে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত এই তেলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি অন্য কোনো রান্নার তেল। একটা সময় এদেশের রান্নার প্রধান তেল ছিল শর্ষের তেল।
যদিও দেশে কখন থেকে সয়াবিন তেলের আমদানি এবং ব্যবহার শুরু হয় তার সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, স্বাধীনতার কিছুদিন আগে থেকে দেশে সয়াবিন তেলের প্রচলন শুরু হয়।
১৯৬১ সালে দেশে সয়াবিন তেলের আমদানি করার পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ২৩০ টন। সে সময় ভোজ্যতেলের মধ্যে শর্ষের ব্যবহার ছিল শতকরা ৮০ শতাংশ। দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছরের মাথায় সয়াবিন আমদানিতে আবারো ভাটা ধরে। এরপর কখনো সয়াবিন, কখনো শর্ষের তেল ছিল ভোজ্যতেলের বাজারে অংশীদারত্ব লড়াইয়ে।
সয়াবিনের বীজ থেকে সয়াবিন তেল তৈরি হয়। বিশ্বে হাতে ধরা মাত্র কয়েকটি দেশে এ সয়াবিন বীজ উৎপাদন হয়। বর্তমানে ১৫টি দেশে বিশ্বের মোট ৯৮ ভাগ সয়াবিন বীজ উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে সেরা চারটি দেশ হলো ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা এবং চীন।
সয়াবিনের বীজ মাড়াই করে তেল উৎপাদন এবং রপ্তানিতেও শীর্ষে এই চারটি দেশের অবস্থান। আমাদের দেশেও এই সয়াবিন বীজ উৎপন্ন হয়। কিন্তু পরিমাণে খুব কম।
প্রত্যেকটি রান্না ঘরে সয়াবিন তেল স্থায়ী হওয়ার পরে সয়াবিন বীজ সংগ্রহ এবং সয়াবিন তেল উৎপাদনে বিনিয়োগ নিয়ে দ্বিতীয় বার ভাবতে হয়নি সয়াবিন ব্যবসায়ীদের। যার লক্ষ্যে মাত্র দেড় দশক আগেই সয়াবিন তেল রিফাইন করার উদ্দেশ্যে সয়াবিন বীজ মাড়াইয়ের কারখানায় টাকা বিনিয়োগ করেন দেশের প্রথম শাড়ীর উদ্যোক্তারা।
জনপ্রিয়তা এবং উপকারিতার কারণে সয়াবিন তেল অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষের নিত্য ব্যবহার্য খাবারের অন্যতম অংশ হয়ে গেছে। চীন বিশ্বের সব থেকে বেশি সয়াবিন তেল ব্যবহার্য দেশ। সয়াবিন তেল ব্যবহারের দিক থেকে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিল।
ব্যবহারের দিক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাদ দিলে সয়াবিন ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এমন তথ্য দিয়েছে কৃষি সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশে বর্তমানে নামকরা বেশ কিছু কোম্পানি বিদেশ থেকে অপোরিশধিত তেল এনে নিজস্ব কারখানায় পরিশোধিত করে বোতল জাত করে বাজার জাত করছে। কোনো কোনো কোম্পানি আবার সরাসরি সয়াবিন বীজ সংগ্রহ করে কারখানায় তেল উৎপাদন করে বাজার জাত করছে।
বাংলাদেশে এমন কয়কেটি নামি কোম্পানির মধ্যে অন্যতম রুপচাদা, তীর, বসুন্ধরা, ফ্রেশ, পুষ্টি অন্যতম।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বাজারে ভোজ্যতেল সয়াবিনের বাজার অস্থিতিশীল রয়েছে। মজুতদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে সাধারণ জনগণ ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সয়াবিন তেল ক্রয়ে।
জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা এই সয়াবিন তেল অপরিশোধিত অবস্থায় দেশে আসছে মূলত তিনটি দেশ থেকে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের সয়াবিনের বাজার। এছাড়াও দেশের চাহিদা পুরনে অন্যান্য দেশ থেকেও বিপুল পরিমাণে সয়াবিন তেল আসছে। যা বাংলাদেশ সরকার সরবরাহ করছে।
ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের সয়াবিন তেলের বাজার দখল করে আছে। তবে ব্রাজিলের থেকে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশে সয়াবিন তেল রপ্তানিতে এগিয়ে আছে।
সয়াবিন তেল মানব শরীরে অন্যান্য তেলের মতো বিশেষ কিছু উপকার এবং অপকার করে থাকে। তবে অপকারের থেকে মানব শরীরে উপকারের সংখ্যা কোনো অংশে কম নয়। সয়াবিন তেলে ভিটামিন ই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপস্থিত। যা মানব শরীরে ভিটামিন ই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে উপকারী কাজ করে। সয়াবিন মানুষের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। একজন মানুষের শরীরে এই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা সয়াবিন তেল মানব শরীরে উপস্থিত হয়ে করে থাকে।
মানব শরীরের হাড়, চোখ এবং ত্বকের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে সয়াবিন তেল। শরীরের হার শক্ত করতে সয়াবিন তেল অত্যন্ত ভুমিকা রাখে। চোখের ফিটনেস রক্ষায় সয়াবিন তেলের গুরুত্ব অনেক।
সয়াবিন তেলে কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আমরা নিত্য দিনে যা কিছুই ব্যবহার করি না কেন সবকিছুরই একটা না একটা অপকারি দিক থাকে। ঠিক একই ভাবে আমাদের নিত্য দিনের রান্নার সঙ্গী সয়াবিন তেল ব্যবহারেও কিছু অপকারিতা রয়েছে।
অতিরিক্ত সয়াবিন তেল গ্রহণে মানব শরীরে ক্যানসার সৃষ্টি হতে পারে। ডায়াবেটিস এমনকি হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এই সয়াবিন তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার।
যেহেতু কোন কিছুই অতিরিক্ত ব্যবহার ভালো না। সেরকমই অতিরিক্ত সয়াবিন তেল ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে।
সয়াবিন তেলের ব্যবহারে এটি মানব শরীরে অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস হিসেবে কাজ করে। যা শরীরের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি বের হওয়ায় এবং খোলাভাবে সয়াবিন তেল সরবরাহ করায় ভেজাল তেলের আধিক্য অনেক বেশি। যা থেকে আমাদের বেছে নিতে হবে সব থেকে অরজিনাল এবং মান সম্পন্ন সয়াবিন।
এজন্য আপনি বোতলজাত তেল ব্যাবহার করবেন, তবে অবশ্যই বিভিন্ন ভালো নামের ব্রান্ডের তেল ব্যবহার করতে পারেন।
সর্বোপরি, সয়াবিন তেলের ভেজাল এবং ভালো মান্সম্পন্ন তেল নিজেদের বুঝে কিনতে চেষ্টা করতে হবে এবং বাজার নিন্ত্রণের জন্য আইনের লোকদের আরও সচেতন অবস্থানে থাকা জরুরি।