নটরাজ অধিকারী: জীবনের এতদিন কোনরকম কাটিয়ে যে এমন একটা দিন আসবে কোনদিন, তা কল্পনাতে-ও ভাবেননি ‘সুলেখা হক’। বসন্ত আসে যেমন কচি পাতার নক্সা এঁকে, পুরনো পাতা সব একে একে হত্যা করে। তদ্রুপ এ’দিন এমন লাগছে সুলেখা হকের। তৃতীয় বারের মতো মা হতে যাচ্ছে সে। স্বামীর সাথে তালাক হওয়ার বছর দুয়েক পরে একটা নামহীন সম্পর্কের জোরে আজকের এ দিন দেখা। প্রয়োজন মানুষকে যতটুকু দেয়, মাঝেমধ্যে হুটহাট করে তার থেকে বেশিকিছু কেড়ে নেয়। সুলেখা হক তাই যেন টের পাচ্ছে এখন। একুশ বছরের সংসার এ যা পেয়েছে, তা হাতে গোনা দুই ছেলে, সীমাবদ্ধ কিছু ভাংচুর, ছোট ছেলের চির সবান্ধব অসুখ, নিজের বুড়িয়ে যাওয়া চামড়ার ভাঁজ ছাপ ফেলে সময়ের গায়ে। প্রতিটি মুহূর্তই যেন কিছু নেই, কিছু না পাওয়ার হাহাকার শোনে শোনে সুলেখার, নিজের ভেতর গোপনে যা যা পাওয়ার বাসনা জেগেছিল, সুলেখা তার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তা পেতে চেয়েও – যেন এখনো সামান্য বাকী রয়ে গেল। নিজেকে কখনো পরিপূর্ণতায় জড়াতে পারেনি সুলেখা! সেই প্রথম সংসারের দায়িত্বগুলো পালন করতে করতে কখন যে সে স্বামী হারা অমাবশ্যার চাঁদহীন রাতের মতো একা হয়ে গিয়েছিল দুই সন্তান কে নিয়ে, তা তার বর্তমান গড়ে ওঠা অ-প্রেমের ফসল উৎপাদনে সবিস্তর ভূমিকা পালন করে। প্রেমে মানুষ অন্তত বেঁচে থাকার রসদে ডুবে যায়। স্বপ্ন দ্যাখে, অর্থহীন নানা বায়না জন্মায়। কাউকে বাড়ি ছাড়ায়,(ভাড়া বাড়ি বদলানোর মতো) কাউকে বা পথে নামায়, ঘরহীন করে – আলোর মতো ঘরহীন। সুলেখা’র অ-প্রেমিক, প্রেমকে আলিঙ্গন করতে গিয়ে আহত পাখির মত মৃত্যুর অপেক্ষায় ভুগে! রোগ-শোক বালা-মুসিবত থেকে বেরিয়ে জীবনের বাকিটা হিসাব আর মিলাতে পারে না ‘স্নেহাশিস রহমান’। মফস্বলি মানুষের কাছে সত্যি বলতে এ প্রেম পতঙ্গভুক উদ্ভিদের প্রত্যেকটিরই অধিষ্ঠাত্রী মধ্যরাত। শহর-নগরের রাত আর মফস্বলি রাতের বিস্তর এক ফারাক। স্নেহাশিস রহমান, পেশায় সেচ্ছাসেবী এবং সম্ভাবনাময় কবি ও সাহিত্যিক। সুলেখা হক এর সাথে যোগাযোগ এ লেখালেখির সূত্রে। সুলেখা হক যে বেশ ভালো লিখে, তা কিন্তু নয়। একাকী জীবন খুঁজে বেড়ায় মাটি-বাতাস ও জল-আগুন। আর এ-সব একত্রে এনে অ-প্রেমের সিম্ফনি বাজায় সুলেখা ও স্নেহাশিস। দিনভর রাতভর নানান স্বপ্নে বিভোর থাকে তারা, অনিশ্চিতের যাত্রায় চলে এ হাঁটাহাঁটি… (সংক্ষেপিত) চলবে…..