গাজীপুর প্রতিনিধি:গত শনিবার রাতে রাত ১১টার দিকে ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ফারুক হোসেন। পথে ১৬ মাস বয়সী মেয়ে ফারিয়ার জন্য কয়েকটি সিঙাড়াও কিনে নেন ফারুক। কিন্তু সেগুলো নিয়ে ফারুক বাড়ি ফিরতে পারেননি, ফিরেছে তার লাশ। গাজীপুরের কাপাসিয়ার দক্ষিণগাঁও চরপাড়া গ্রামে এক তরুণীর ফেসবুক পোস্টে ‘হা-হা’ রিঅ্যাক্ট দেওয়া নিয়ে বিতর্কের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত তিনজনের একজন ফারুক হোসেন।
ফারিয়া আধো আধো কণ্ঠে বাবা ডাকতে শুরু করেছে মাত্র। তার বাবাও একমাত্র মেয়েকে অনেক আদর করতেন। কিন্তু ফারুকের বাড়িতে এখন শত শত মানুষ ছুটে আসছে তার শিশুকন্যা ফারিয়াকে দেখার জন্য। সে বাবাকে এদিক-সেদিক খুঁজতে থাকে।
ফারুক হোসেনের স্ত্রী নূরজাহান জানান, ২ বছর তিন মাস আগে তার ফারুক হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। পারিবারিক সিদ্ধান্তে নির্মাণশ্রমিক ফারুক হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরে ফারুক বাড়তি আয়ের জন্য সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করতেন। দুই ভাই এক বোনের পরিবারে বড় ছেলে হিসেবে ফারুক পুরো দক্ষতার সঙ্গেই পরিবার পরিচালনা করছিলেন। স্বামীর উপার্জনের ওপর যে পরিবার নির্ভরশীল সেখানে শিশু ফারিয়াকে নিয়ে তার কীভাবে সংসার চলবে এখন- এমন প্রশ্ন আর সংশয় নূরজাহানের মনে।
নূরজাহান জানান, শনিবার রাত ১১টার দিকে ফারুক হোসেন ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরার পথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হট্টগোল দেখতে পান। এ সময় কিছু অপরিচিত যুবককে সেখানে কী হয়েছে, জানতে চাইলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুরি দিয়ে তারা ফারুকের পেটে আঘাত করে। পরে তাকে মনোহরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রোববার রাত ১০টার দিকে জানাজা শেষে ফারুকের লাশ দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সূত্রে মারিয়ার (২২) সঙ্গে নাঈমের (১৮) পরিচয় হয়। কিছু দিন আগে মারিয়া ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করলে নাঈম এতে হা-হা রিঅ্যাক্ট দেয়। এ নিয়ে ফেসবুক ও ইমোতে তাদের নানা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এর পর মারিয়ার ছবি ব্যবহার করে নাঈম ‘টিকটক ভিডিও’ বানিয়ে তার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এ নিয়ে তাদের মাঝে চলে চরম উত্তেজনা।
এতে মারিয়া ও তার স্বামী ক্ষুব্ধ হয়ে নাঈমকে দেখে নেয়ার হুমকি দিলে সে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। পরে দলবল নিয়ে মারিয়া ও তার স্বামী গত শনিবার রাত ১১টার দিকে কাপাসিয়ার আড়ালবাজারের পূর্ব পাশে দক্ষিণগাঁও চরপাড়া গ্রামে এসে হামলা চালায়। এতে নাঈমসহ তিনজন নিহত হন। এ সময় আরও ছয়জন আহত হন।
স্থানীয়রা জানান, ফেসবুকে ছবিতে হা-হা রিঅ্যাক্টের জেরেই উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের চরআলীনগর গ্রামের মারিয়া ও তার স্বামী জাহিদের সঙ্গে নাঈমের বিরোধ দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে নাঈম টিকটকে মারিয়ার ছবি ব্যবহার করায় সে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এর আগে শনিবার রাতে এ নিয়ে ইমোতে কথা কাটাকাটি হলে মারিয়া ও তার স্বামী পার্শ্ববর্তী মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর এলাকার ৮-১০ জন যুবককে নিয়ে দক্ষিণগাঁও গ্রামে নাঈম ও অন্যদের ওপর হামলা চালায়। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত নয়জন গুরুতর আহত হয়।
মুমূর্ষু অবস্থায় আহতদের কয়েকজনকে উদ্ধার করে মনোহরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক নাঈম হোসেন (১৮) ও ফারুক হোসেনকে (২৬) মৃত ঘোষণা করেন এবং অন্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। নিহত নাঈম দক্ষিণগাঁও চড়পাড়া এলাকার মৃত আলম হোসেনের এবং ফারুক হোসেন একই গ্রামের আলম হোসেনের ছেলে। পরে রোববার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর আহত রবিনের (১৬) মৃত্যু হয়।